‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য যে ব্যয় প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তা জাতীয় সংসদে হবহু পাস হয়েছে। রোববার আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১১তম বাজেট, যাকে ‘স্মার্ট’ বাজেট বলছে অর্থমন্ত্রণালয়; ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার এ বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়। এ বাজেটের মূল লক্ষ্য ধরা হয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের স্তর পেরিয়ে এবং ধারাবাহিকভাবে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে একটি শান্তিপূর্ণ, সুখী উন্নত- সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার। গত ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ স্লোগানে জাতীয় সংসদে এ বাজেট পেশ করেন। তবে সেদিন বাজেট পেশের এক পর্যায়ে অসুস্থ্য অর্থমন্ত্রী বক্তৃতা দিতে অসুবিধাবোধ করায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পক্ষে বাজেট বক্তৃতার বাকিটা পড়ে দেন।
এছাড়াও গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীর পক্ষে সংসদে অর্থ বিল, ২০১৯ পাসের প্রস্তাব এবং বিলের ওপর আনীত বিভিন্ন সংশোধনীসহ জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানোর জন্য যে প্রস্তাব, তারও জবাব দেন। রোববার বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবিগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়। এসব দাবির মধ্যে মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে বিরোধীদলের সংসদ সদস্যারা মোট ৮৮৩টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় খাতে ৪টি মঞ্জুরি দাবিতে আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়।
এরপর সংসদ সদস্যগণ টেবিল চাপড়িয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৯ পাসের মাধ্যমে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট। এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালেরও প্রথম বাজেট।
বাজেট আলোচনা
গত ১৬ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত মোট ১২ কার্যদিবস সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় উপনেতা বেগম রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও অন্যান্য মন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধীদলের সদস্যরা মূল বাজেট ও সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন। বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা, এছাড়া, এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। কর বহির্ভুত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেটে সামাজিক অবকাঠামোগত খাতে মোট ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ২৭.৪১ শতাংশ। এর মধ্যে মানব সম্পদ খাতে- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বরাদ্দের মধ্যে শিক্ষা খাতে ২৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা রয়েছে। ভৌত অবকাঠামো খাতে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৬৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা, বৃহত্তর যোগাযোগ খাতে ৬১ হাজার ৩৬০ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা রয়েছে। সাধারণ সেবা খাতে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ২৩.৬৩ শতাংশ।
এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) এবং বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ ৩৩ হাজার ২০২ কোটি টাকা বরাদ্দের দেয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৬.৩৫ শতাংশ। সুদ পরিশোধ বাবদ ৫৭ হাজার ৭০ কোট টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ১০.৯১ শতাংশ। নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে ১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ০.২৪ শতাংশ।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।