২০ মাসে দেড় লক্ষ শিশুর জন্ম, অন্তঃসত্ত্বা আরও ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা নারী!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৩ই জুন ২০১৯ ০৪:২০ অপরাহ্ন
 ২০ মাসে দেড় লক্ষ শিশুর জন্ম, অন্তঃসত্ত্বা আরও ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা নারী!

দেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার যে বিপুল চাপ, তার মধ্যে এসে পড়েছে নতুন আরও অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী। যাদের সিংহভাগই নারী। অশিক্ষিত রোহিঙ্গা মুসলিমরা তাদের ধর্ম বিশ্বাসের কারনেই জন্ম নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী নয়। ফলে এই শরণার্থী অবস্থায় ভাসমান জীবনেও থেমে নেই তাদের অরক্ষিত যৌন সঙ্গম। ফলে জন্ম নিচ্ছে হাজার হাজার শিশু। যার পুরো চাপটাই এসে পড়ছে আশ্রয়দাতা দেশ বাংলাদেশের ওপর। বন জঙ্গল উজাড় করে যেমন তারা হাজার কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করছে, তেমনি গণহারে শিশু জন্ম দিয়ে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের এক মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলছে বাংলাদেশকে। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো যুক্ত হচ্ছে মারাত্মক সংক্রামক সব রোগ!

সরকারি হিসাবমতে, গত ২০ মাসে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জন্ম নিয়েছে দেড় লক্ষেরও বেশি শিশু। আর বর্তমানে গর্ভবতী আছেন আরও ৩৫-৩৬ হাজার নারী। তবে বেসরকারি হিসাবমতে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। রোহিঙ্গাদের এ জন্মের হার এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের সংখ্যা সে বিষয় নিয়ে চিন্তিত কক্সবাজারের স্থানীয়রা। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন করা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ ধারণ করবে বলে তাদের আশঙ্কা। কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যম্পের ইউনিসেফ সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক তাদের ঢাকা হেড অফিসের জরিপে গত এক বছরে ৬০-৭০ হাজার শিশু নবজাতক জন্মগ্রহণ করে। এদিকে গত বছর কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস ১৮-২০ হাজার গর্ভবর্তী নারী সনাক্ত করেছেন। তবে তারা বলছেন চলতি বছরের ডিসেম্বরে ১ লক্ষ শিশু জন্মগ্রহণ করতে পারে। একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন গবেষণা করে বলছেন কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো প্রতিদিন ১৩০জন শিশু জন্ম গ্রহণ করছেন।

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, অনেক ভয় আশঙ্কার মধ্যে দিনতিপাত করছি। এখানকার ভবিয্যতের কথা চিন্তা করলে প্রায় সময় চোখে জল চলে আসে। এই রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কিভাবে আমরা মুক্তি পাব তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছি না। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের পাহাড় পর্বত জমি-জায়গা দখল করতে শুরু করছে। অন্যদিকে অপরাধ চক্রের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে জনসংখ্যা। কি যে এক ভয়াভহ পরিস্থিতিতে বসবাস করছি তা বুঝে উঠতে পাচ্ছি না। যে হারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ বাড়ছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার।

উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. সরোয়ার আলম শাহীন বলেন, আমরা এখন এক ধরনের গৃহবন্দীর মতো বসবাস করছি। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গারা আমাদের বনভূমি, পাহাড় জংগল, জলাশয়, রাস্তাঘাট প্রাকৃতিক পরিবেশসহ এমনকি কর্মসংস্থানের পরিবেশ ও ধ্বংস করে ফেলেছে। এছাড়াও নানাভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে নানাভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এছাড়া ও জীবন-যাত্রার মান সংকটাপন্ন হচ্ছে দিন দিন। এভাবে চলতে থাকলে স্থানীয়রা কিছু দিন পরে রোহিঙ্গাদের কাছে লেবার হিসেবে কাজে যেতে হবে। অপর দিকে যে সকল এনজিও আছে তারা চায় না রোহিঙ্গা এদেশ থেকে চলে যাক। রোহিঙ্গাদের কারণে দিন দিন নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা এখন আর কাজ কর্ম করতে পারছে না। সরকার দ্রæত রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে ফেরৎ পাঠাতে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

সেভ দ্য চিলড্রেন মিডিয়া তদারককারি ম্যানেজার ইভান শারম্যান বলেন, কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে ২০১৯ সালের শেষের দিকে গিয়ে প্রায় ১ লক্ষ নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণ করবে। এমনটাই ধারণা করছি আমরা। এমনিতেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গাদাগাদি এসব শিশু জন্ম নিলে আরো গাদাগাদি বেড়ে যাবে। এমনিতেই ক্যাম্পগুলোতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সামনে আরো বিপদ দেখা দিতে পারে। রোহিঙ্গারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে আগ্রহী না। ক্যাম্পগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকার কারণে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া,সর্দি কাশি ও কলেরা রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।

টেকনাফ ২১ নং ক্যাম্পের মেডিকেল অফিসার ডা. আয়েশা কবির বলেন, রোহিঙ্গারা এমন এক জাতি তারা যেটা বুঝে সেটাই তাদের চলাচল। তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে চায় না। তারা ধর্মকে বেশি প্রধান্য দিতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক নবজাতক শিশু জন্ম দিচ্ছেন। কোনোভাবেই তারা ডাক্তারের কথা শুনতে রাজি না। টেকনাফ পৌরসভার মেয়র হাজি মো. ইসলাম বলেন, অত্যন্ত দুঃখে আছি যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। কক্সবাজার টেকনাফের পরিবেশ বিনষ্ট করে ফেলছে রোহিঙ্গারা। আর কিছু দিন গেলে রোহিঙ্গাদের কাছে আমাদের গোলামি করতে হবে। রোহিঙ্গারা আসার পর হতে টেকনাফ বাজারে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া বাড়ছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। অন্যদিকে রোহিঙ্গা সরকারি চাল ডাল পেয়ে খাচ্ছে আর নবজাতক শিশু জন্ম দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ এখান থেকে পাড়ি জমাচ্ছে সুদূর মালেশিয়া ও সৌদি আবর। অপরদিকে রোহিঙ্গারা এখান থেকে গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব