সরবানুর বয়স এখন ৯০ বছর। ১০ বছর আগে তিনি একদিন মাটিতে পড়ে যান। ব্যথা পান পায়ে। ট্যাবলেট খেয়ে প্রাথমিক চিকিৎসায় ভালোই ছিলেন কিছুদিন। ছিল অর্থের অভাব, ছেলেরা তাই উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি তার। অচল হয়ে যান তিনি ধীরে ধীরে। তারপর একদিন পুরো অন্ধ। বিপদের শেষ ধাপটা শুরু হয় সরবানুর তখনই। নিজে একা একা চলতে পারেন না, বিছানাতেই সবকিছু সারতে হয় তাই তাকে। সামর্থ্যহীনতা আর অপারগতার মিশেলে ছেলেরা একদিন মাকে রেখে আসেন পাশের পরিত্যক্ত গোয়ালঘরে, একটি ভাঙা চৌকিতে। জরাজীর্ণ ওই গোয়ালঘরেই সরবানুর আজ প্রায় তিন বছর। আধা পেট আর বিনা চিকিৎসায় তার প্রতিদিন।
দুই পুত্রবধূসহ পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা এরই মধ্যে ফাঁকে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাদের মুখ এবং অবয়ব একসঙ্গে বলে, 'আমাদের করার কী আছে? আমরা না পারি তার চিকিৎসা করাতে, না খাওয়াতে। তা ছাড়া দুর্গন্ধে তার কাছেই যাওয়া যায় না। আমরা নিজেরাই যে অনেক গরিব, অসহায়।'
রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, 'এ বৃদ্ধার বিষয়ে আমি জানতে পেরে দেখতে গিয়েছিলাম তাকে। তার স্মরণশক্তি ভালো। বংশীয় পরিবারের সন্তান তিনি। কিন্তু অশিক্ষা বা অসচ্ছলতা যেটাই বলুন, তার সন্তানদের অবহেলা ও অবজ্ঞার জন্যই আজ তার এ দুরবস্থা। পিঁপড়ার কামড়ে জর্জরিত হয়ে সেখানে দিন কাটাচ্ছেন। যখন পায়ে ব্যথা পেয়েছিলেন, তখন যদি মায়ের প্রতি ভালোবাসার টানে সন্তানরা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতেন, চিকিৎসা করাতেন, তাহলে এ দুর্ভোগ হতো না তার।' ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক এরই মধ্যে জেনেছেন বিষয়টি। সরকারি সফরে অস্ট্রেলিয়ায় এখন তিনি। সেখান থেকেই নির্দেশনা দিয়েছেন- শিশুসদনে যেন থাকার ব্যবস্থা করা হয় সরবানুর।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব