আজ ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো, নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো’- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে আজ পালিত হচ্ছে দিবসটি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর অধিকার রক্ষা, নারী-পুরুষের সমতা ও নারীর প্রতি ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠাই নারী দিবসের মূল লক্ষ্য।দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় সমাবেশ, শোভাযাত্রা, সেমিনার, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সুতা কারখানার একদল শ্রমজীবী নারী মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং কর্মক্ষেত্রে বৈরী পরিবেশের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের ওপরে দমন-পীড়ন চালায় মালিকপক্ষ। নানা ঘটনার পরে ১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ও রাজনীতিবিদ ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম নারী সম্মেলন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে পালন করছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, নারীর অধিকার ও মর্যাদা লাভের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে সৃজনশীল ও উন্নয়নমূলক সব কর্মকাণ্ডে পুরুষের পাশাপাশি নারীর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতার জন্য সুদীর্ঘ সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নারী সমাজ অসামান্য ভূমিকা রেখেছে।প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, সরকার এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন বাড়ানোর মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ।
কর্মসূচি দিবসটি উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৯ মার্চ শনিবার সকাল নয়টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।অনুষ্ঠানে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ পাঁচজন জয়িতাকে পুরস্কৃত করা হবে। এছাড়া শনিবার দেশের সব জেলা শহরে নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনী, মেলা এবং জনসচেতনতামূলক ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হবে।দিবসটির প্রতিপাদ্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। ৬৬টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি দিবসটি উপলক্ষে আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
দুপুর আড়াইটায় কর্মসূচি শুরু হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ পাঁচটায় জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নারী সাংবাদিকদের সম্মাননা এবং ‘গণমাধ্যমে নারী-পুরুষ সমতা পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি শুক্রবার সকাল ১০টায় সংগঠনের চত্বর থেকে র্যালি বের করবে এবং সাড়ে তিনটায় সাগর-রুনী মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমে নারী-পুরুষ সমতা: বাস্তবতা ও করণীয় শীর্ষক’ আলোচনা সভা এবং ডিআরইউর সাবেক নারীবিষয়ক সম্পাদকদের সংবর্ধনার আয়োজন করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে নয়টায় রোডশো করবে নারীপক্ষ। জাতীয় কন্যা শিশু এডভোকেসি ফোরামের উদ্যোগে আজ সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক আয়োজিত সংহতি সমাবেশ, শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে চারুকলার বকুলতলায় আজ বিকাল তিনটায়। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ‘মেটার্নিটি ছুটির ক্ষেত্রে পাবলিক এবং প্রাইভেট বৈষম্যের প্রতিবাদে’নারী শ্রমিকরা কালো পতাকা র্যালি করবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১১টায়।গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন ‘নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার’ দাবিতে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাল পতাকা র্যালি বের করবে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আজ বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হচ্ছে ‘জলকন্যা’শীর্ষক এক প্রদর্শনী।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।