পারিবারিক সম্পর্কগুলো মধুর ও শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য মহানবী (সা.)-এর জীবনে রয়েছে নানা দিকনির্দেশনা, যা অনুসরণ করে যে কেউ সুখী ও সফল দাম্পত্য জীবন গঠন করতে পারে। নবীজির (সা.) আদর্শ আজও বিশ্ববাসীর জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, বিশেষ করে বৈবাহিক জীবনের ক্ষেত্রে। তিনি একদিকে যেমন পরিবারের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন, তেমনি ঘরোয়া কাজে অংশগ্রহণ ও সঙ্গিনীর প্রতি সহানুভূতির মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
প্রথমত, নবীজির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ হলো, পরিবারকে সময় দেওয়া। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.)-এর এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, "কথাবার্তায় আত্মসংযমী হবে, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবে এবং নিজের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হবে।" এটা পরিষ্কার যে, পরিবারের সঙ্গে শারীরিক উপস্থিতি নয়, বরং মানসিক ও আবেগিক উপস্থিতি অনেক বেশি জরুরি। ঘরের কাজ বা মোবাইল ফোনের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি নয়, বরং সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা ও মনোযোগী থাকা জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
দ্বিতীয়ত, ঘরোয়া কাজে সঙ্গীকে সাহায্য করা। অনেকেই মনে করেন, ঘরের কাজকর্মে অংশগ্রহণ করা পুরুষদের জন্য অনুচিত, তবে নবীজির আদর্শ উল্টো। তিনি নিজেই তার পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করতেন। হাদিসে বর্ণিত, "রাসুল (সা.) ঘরের কাজকর্মে তাঁর স্ত্রীর সাহায্য করতেন এবং নামাজের সময় নামাজের জন্য চলে যেতেন।"
এছাড়া, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে সঙ্গিনীর মতামত নেওয়াও নবীজির একটি বড় শিক্ষা। তিনি শুধু ঘরোয়া বিষয় নয়, বরং উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোতেও স্ত্রীদের মতামত নিতেন। বিশেষভাবে, হুদায়বিয়ার সন্ধি প্রেক্ষাপটে উম্মে সালমা (রা.)-এর মতামত তাঁর সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
নবীজির দাম্পত্য জীবন ছিল প্রেম ও আন্তরিকতার মূর্ত প্রতীক। তিনি তাঁর স্ত্রীদের প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.)-কে তিনি "সবার চেয়ে প্রিয়" বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। একসাথে খাবার খাওয়া, গোসল করা, বা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মতো ছোট ছোট বিষয়গুলো তাদের সম্পর্ককে মধুর এবং শক্তিশালী করে তুলেছিল।
শেষে, নবীজির উপদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সঙ্গীকে ভালোবাসা এবং তাকে শ্রদ্ধা দেওয়া। তিনি বিশ্বাস করতেন, পারিবারিক শান্তি ও সুখী জীবন গঠনে সঙ্গীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই। তাঁর আদর্শ যদি আমরা অনুসরণ করি, তবে পারিবারিক কলহ দূর হয়ে একটি সুখী ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে ওঠবে।
এছাড়া, দাম্পত্য কলহের অবসান ও পারিবারিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের জীবনে নবীজির এ সমস্ত শিক্ষা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এই নৈতিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।