আওয়ামী লীগ খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল : ডা. শফিকুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
এহসান বিন মুজাহির জেলা প্রতিনিধি , মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: শনিবার ২১শে ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:১৭ অপরাহ্ন
আওয়ামী লীগ খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল : ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামীলীগ বিগত সাড়ে ১৫ বছর খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা জানান দিয়েছিল ক্ষমতায় আসার দুই বছর আগে, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর স্পষ্ট দিবা-লোকে লগি বৈঠার তান্ডব চালিয়ে আদম সন্তানদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে তাদের লাশের উপর দাঁড়িয়ে যখন নৃত্য করে উল্লাস করছিল তখন তারা জাতিকে জানিয়ে দিয়েছিল যে, আমরা ক্ষমতায় আসলে এই খুনের রাজনীতিই করবো। আমরা সেদিন আমাদের বুকের কান্না বাংলাদেশের জনগণের কাছে হয়তো বা পৌছাতে পারিনি। তারা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে তা শুরু করেছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পেছনের দরজায় বোঝাপড়া করে নির্বাচনী ইঞ্জিনিয়ারিং করে ক্ষমতায় এসেছিল। ক্ষমতায় এসেই তারা খুনের রাজনীতি শুরু করে। প্রথমেই তারা পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চালায়। আওয়ামী লীগ কাউকেই রেহাই দেয়নি। তারা জামায়াতের পর, বিএনপিকে ধরেছে, তারপর হেফাজত এবং দেশের আলেম উলামাকে অপদস্থ করেছে। সাংবাদিকদের খুন, গুম করেছে। জেলে ভরেছে। গুম-খুনের নির্দেশদাতা হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। 


শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জামায়াত ইসলামীর মৌলভীবাজার জেলা শাখার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। 


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মৌলভীবাজার জেলার শাখার উদ্যোগে শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কর্মী সম্মেলন-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান। মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয়য় মজলিসে শুরা সদস্য ও  সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, জামাতের ঢাকা পল্টন থানার সভাপতি শাহীন আহমদ খান, সিলেট মহানগরীর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুর রব প্রমুখ।


এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার জামায়াতের সাবেক আমির সিরাজুল ইসলাম মতলিব, মো. আব্দুল মান্নান, হবিগঞ্জের জেলা আমির কাজী মখলিছুর রহমান, জামায়াতের মৌলভীবাজার কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম, শিবিরের সিলেট মহানগরী সভাপতি শরীফ মাহমুদ,সদরের আমির মো. ফখরুল ইসলাম, কুলাউড়া আমির আব্দুল মুনতাজিম, রাজনগর আমির আবু রাইয়্যান শাহিন, মৌলভীবাজার পৌর আমির তাজুল ইসলাম, মৌলভীবাজার শিবিরের জেলা সভাপতি হাফিজ আলম হোসাইন, মৌলভীবাজার পৌর শিবিরের সভাপতি তারেক আজিজ।


এছাড়া সম্মেলনে বক্তব্য বন্ধুপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. ফয়জুল করিম ময়ূন, খেলাফত মজলিস নেতা অধ্যাপক মাওলানা আব্দুস সবুর। কর্মীসম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয়, সিলেট বিভাগীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।


জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান ভারত প্রসঙ্গে বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) যে দেশে আশ্রয় নিয়েছেন তারা আমাদের প্রতিবেশি। প্রতিবেশির প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই, আপনারা শান্তিতে থাকুন আমরা চাই। আমাদেরকে আপনারা শান্তিতে থাকতে দিন। আপনাদের পাকঘরে কী পাকানো হয় আমরা জিজ্ঞেস করতে চাই না। আমাদের পাকঘরে উঁকি মেরে তাকানোর চেষ্টা করবেন না। আমাদেরকে আপনারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন কিন্তু নিজের চেহারা একবার আয়নাতে ভালোভাবে দেখুন । আপনারা সেখানে যাদেরকে মাইনরিটি বলেন তাদের সাথে কেমন আচরণ করেন।


ডা. শফিক আরো বলেন, চক্রান্ত করে বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীর নাম বদলে তারা বিজিবি দিল। বাাংলাদেশ রাইফেলস নামের ভেতরে একটি শৌর্য বীর্য আছে। এখন নাম দিয়েছে বর্ডারের চৌকিদার। তারা নাম বদলিয়েছে, ড্রেস বদলিয়েছে। বিদ্যুত বন্ধ করে রাতের অন্ধকারে খুনিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একটি বিশেষ দেশের প্লেন সেদিন কেন এসেছিল ঢাকায়? এরপর হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেল কিভাবে?


কর্মী সম্মেলনে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রকাশ্যে জনসভায় সংগঠনের প্রধান আমীরে জামায়াতের উপস্থিতিতে এটাই প্রথম। দীর্ঘ দেড়যুগ পর মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিশাল কর্মী সম্মেলন প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের সমাগম ছিল। এছাড়া এ সম্মেলনটি জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের নিজ জেলায় হওয়ায় সংগঠনের নেতাকর্মীর বাইরে সাধারণ জনতাদের মাঝেও বেশ উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।