ইনানীর প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যান এক যুগেও আলোর মুখ দেখেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ২৭শে জানুয়ারী ২০১৯ ০৪:৪৮ অপরাহ্ন
ইনানীর প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যান এক যুগেও আলোর মুখ দেখেনি

কক্সবাজারের উখিয়ার উপকুলীয় জালিয়াপালংয়ের ইনানীর ১০ হাজার হেক্টর বনভূমি নিয়ে গড়ে তোলা প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যান কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে যুগ ধরে। বন্যপশু প্রাণী, জীববৈচিত্র্যের উন্নয়নসহ ইকো-ট্যুরিজম স্পটের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি অজ্ঞাত কারণে লাল ফিতায় আটকে রয়েছে। যে কারণে সম্ভাবনাময় আয়ের উৎস পর্যটন স্পটটি মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে বলে দাবি করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদী সচেতন মহল। ইনানীর রক্ষিত বনাঞ্চলসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, ইনানীর ১০ হাজার হেক্টর বনভূমিকে পর্যটন শিল্পে রূপান্তর করে সরকারের প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ দেশি বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে জাতীয় উদ্যান হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি প্রাপ্তির জন্য ইতিপূর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বেশ কয়েকবার আবেদন আকারে পরিপত্র প্রেরণ করা হলেও কার্যত কোন সুফল পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মহিউদ্দিন প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করে এ বনটিকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে খুব সহসাই অনুমোদন দেওয়ার আশ্বস্ত করলেও তা এখনো পর্যন্তও আলোর মুখ দেখেনি। তিনি  আরো বলেন, জাতীয় উদ্যানের নির্ধারিত জায়গা দখল করে জনবসতি গড়ে উঠার কারণে বন্যপশু প্রাণী লোকালয়ে বেরিয়ে পড়ছে।

এ প্রসঙ্গে ইনানী বনরেঞ্জ কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন মিয়া জানান,অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ পাহাড় কেটে মাটি পাচার প্রতিরোধ করতে গেলে মুঠোফোনে হুমকি প্রদর্শন করা হয়। তিনি বলেন, ইনানীর ন্যাড়া বনে গাছ-গাছালি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বনায়নে রূপান্তর হয়েছে। যা জাতীয় উদ্যানে স্বীকৃতির উপযোগী। তবে গত ১ বছর ধরে ইনানীর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ওই বনভূমির জায়গা দখল করে বসতি স্থাপনের ফলে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর প্রভাব পড়েছে। মনখালী রক্ষিত বনাঞ্চল সহায়ক কমিটির সভাপতি নুরুল আবছার জানান, স্থানীয় বনবিভাগের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ইনানীর বন থেকে কাঠ পাচার অব্যাহত রয়েছে। পাহাড় কেটে মাটি পাচারের ফলে জাতীয় উদ্যান কর্মসূচি হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি আরো জানান, ইনানীর বনকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে অনুমোদন দেওয়া হলে বন বিভাগের কর্তৃত্ব থাকে না। বছর বছর বন বাগান সৃজনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়াও বন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনৈতিক ফায়দা থেকে বনকর্মীরা বঞ্চিত হবে। যার প্রেক্ষিতে জাতীয় উদ্যান অনুমোদনে তারা বেঁকে বসেছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। যার ফলে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ইনানীয় ১০ হাজার হেক্টর বনভূমিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে অনুমোদন দিতে গড়িমসি করছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, দেশের ২য় বৃহত্তম পর্যটন স্পট ইনানীর ১০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যান বাস্তবায়নসহ ইনানীকে পর্যটন শিল্পে আধুনিকায়ন করার জন্য জেলা প্রশাসক ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে কিছু কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যানের উন্নয়নের ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

ইনিউজ ৭১/এম.আর