সবজী চাষে রেশাদ আলীর ভাগ্য বদল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ১১ই জানুয়ারী ২০১৯ ০২:৪৯ অপরাহ্ন
সবজী চাষে রেশাদ আলীর ভাগ্য বদল

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মানিকা গ্রামে বিভিন্ন সবজী চাষ করে শূণ্য থেকে বর্গাচাষী রেশাদ আলী অভাবকে দূর করে ভাগ্য বদলে ফেলেছেন। বৃহস্পতিবার সবজী চাষ নিয়ে কথা বলেন রেশাদ আলী। তিনি মনে করেন, কঠোর পরিশ্রম মানুষের ভাগ্য বদলে দেয়। রেশাদ আলী জমি বর্গা নিয়ে এ বছর  প্রথমে ৫৬ শতাংশ জমিতে মল্লিকা জাতের  রেখা  চাষ করেছেন। এতে সব মিলিয়ে  তার ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১ লাখ টাকার রেখা বিক্রি করেছেন। ওই জমিতে রেখা ওঠার পর শ্রাবন্তী জাতের লাউ চাষ করেন। খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত বিক্রি নেমেছে ৯৫ হাজার টাকা। লাউ খেতের বিপরীত দিকে ২৪ শতাংশ জমিতে কাতলা জাতের শিম চাষ করেছেন। মূলধন ছিল ১২ হাজার টাকা। ৩০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। খেতে এখনও শিম আছে। শিম খেতের পাশেই  ৩২ শতাংশ জমিতে ¯েœা-হোয়াইট জাতের ফুলকপি চাষ করেছেন। বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা।

তিনি আশা করছেন শেষ পর্যন্ত বিক্রি ৪০ হাজার টাকার উপর ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া দেড় একর জমিতে ডায়মন্ড জাতের আলু চাষ করেছেন। ৮০ হাজার টাকা খরচ হেেছ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২ লাখ টাকার উপর বিক্রি নামবে বলে তিনি আশাবাদী। রেশাদ আলী জানান, কৃষি অফিসের মাধ্যমে সবজি চাষের উপর বিভিন্ন সময়ে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাছাড়া ওই এলাকার দ্বায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন তাকে পরামর্শের পাশাপাশি নতুন কোন সবজীর জাত এলে তা চাষ করতে উদ্ধুদ্ধ করেন। তিনি আরো জানান, এলাকার বেকার যুবকরা সবজী চাষে উদ্ধুদ্ধ হয়ে তার কাছে চাষ প্রণালী জানতে আসছেন। তিনিও সাধ্যমতো পরামর্শ দেন।  

বোরহানউদ্দিন আলিয়া মাদ্রাসা সড়কের দুই পাশে লাউ,শিম,কপি আর বিস্তৃত আলু খেত দেখে যে কারো চোঁখ জুড়িয়ে যাবে। পথচারী সহ শিক্ষার্থীদের খেতে মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে। আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবি আহমদ উল্যাহ আনসারী বলেন, রেশাদ আলী ও তার ভাইদের সবজী এ এলাকাকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। মনে হয় চিরায়ত বাংলার সবাক ছবি। সবজী চাষী রেশাদ আলী তার সাফল্যের কথা জানাতে গিয়ে বলেন,আমি দরিদ্র কৃষক বাবার সন্তান। পরিবারের ৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে আমি সেঝো। আমার ভাইরা সবাই কৃষিকাজ করে। আমার দরিদ্র কৃষক বাবার ভিটেমাটি ছাড়া কোন নিজস্ব জায়গা জমি নেই,আমার বাবাও অন্যের জমি চাষ করতো। অনেক অভাব অনটনে চলতো আমাদের সংসার। পড়াশুনা কতদূর এ প্রশ্নে হতাশার সুরে তিনি জানান, প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভাবের কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আমাদের ঘরে ২ টি মেয়ে।

বড় মেয়ে খাদিজা স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসায় নবম শে্িরণ আর ছোট মেয়ে আয়েশা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। সংসার চলাতে দিনমুজুরী করে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতে থাকি। এরপর প্রতিবেশী শুক্কুর আলীর অনুপ্রেরণায় প্রথমে আমি  মাত্র ৮ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ শুরু করি। এতে অল্প কিছু টাকা লাভ হয়। আস্তে আস্তে টাকা জমিয়ে চাষ বাড়াতে থাকি এবং বেশ সফলতা পাই। শিম, কপি আর আলু উঠে গেলে একই জমিতে আখ চাষ করা হবে। এখন তিনি খেয়ে পড়ে ভালো আছেন বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি জানান, তার স্ত্রী ঝুমু আক্তার সব সময় তাকে সহযোগীতা করে। রেশাদ আলী আর ঝুমু আক্তারের একটিই স্বপ্ন তাদের সন্তানদের সু-শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। কৃষিকাজ  তাদের অভাব দূর করেছে। ওই ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, রেশাদ আলী অত্যন্ত পরিশ্রমী। সে আমাদের পরামর্শ-উপদেশ যথাযথভাবে পালন করে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান,রেশাদ আলী বোরহানউদ্দিনের সবজী চাষীদের মধ্যে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ। কৃষি অফিস সব সময় সর্বাত্বক সহযোগীতা করে আসছে,ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে