'ত্যাগ ও আস্থার মূল্যায়ন পেলেন হাছান মাহমুদ'

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ৭ই জানুয়ারী ২০১৯ ০৯:৩০ অপরাহ্ন
'ত্যাগ ও আস্থার মূল্যায়ন পেলেন হাছান মাহমুদ'

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ও বোয়ালখালি উপজেলার শ্রীপুর-খরন্দ্বীপ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ। ২০০৮ সালের প্রথম ছয় মাস পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পরবর্তীতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রাণালয়ের পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রি হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দলের জন্য ছাত্রজীবন থেকেই কাজ করে গেছেন একাগ্রচিত্তে। ২০০১ সাল থেকে ওয়ান-ইলেভেনের জরুরী অবস্থাতেও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ছিলেন দৃঢ় অবস্থানে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর ধারাবাহিক জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন ও নৈরাজ্যের সময় সারাক্ষণ মাঠে ছিলেন তিনি। এভাবে দলের জন্য কাজ করার স্বীকৃতি স্বরূপ এবার তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। এ খবরে আনন্দের বন্যা বইছে রাঙ্গুনিয়া সহ সারা চট্টগ্রামজুড়ে। সোমবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে তিনি বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছেন। তথ্যমন্ত্রাণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে রাঙ্গুনিয়ার প্রায় সব স্তরের নেতৃবৃন্দ তাঁকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে গেছেন ঢাকায়। সোমবার সকাল থেকেও অনেক নেতাকর্মীকে ঢাকায় যেতে দেখা গেছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার খবরে রোববার এলাকায় মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। সোমবার আনন্দ র‌্যালি করেছে রাঙ্গুনিয়ার সচেতন তরুণ প্রজন্ম নামে একটি সংগঠন।

১৯৬৩ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সুখবিলাস গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. হাছান মাহমুদ। বাবা প্রয়াত নুরুচ্ছফা তালুকাদার ছিলেন চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও দুই মেয়াদে চট্টগ্রাম আদালতের পিপি। মূলত ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়েই তার রাজনৈতিক জীবনে পদার্পন। ছাত্রজীবনে ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক, ১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ১৯৯০ সালে চাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত সর্বদলীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মনোনীত হন ও পরবর্তীতে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পড়ালেখার জন্য ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে গেলে সেখানেও নিজ উদ্যোগে বেলজিয়াম আওয়ামীলীগকে সংগঠিত করেন এবং সেখানে তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ব্রিজে ইউনিভার্সিটির দক্ষিন এশিয়া ভিত্তিক স্টুডেন্ট ফোরামের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পান।

আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ডাকে ২০০১ সালে দেশে ফিরেই তিনি দলের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মনোনীত হন। পরবর্তী আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্বকালে তিনি সয়েছেন বিভিন্ন নির্যাতন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি নেত্রীর পক্ষে গণমাধ্যমে সরব ভূমিকা পালন করেন। ২০০৮ সালে প্রথম নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন হাছান মাহমুদ। এরপর প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরে পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া ড. হাছান মাহমুদকে পরবর্তীতে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১৪ সালে কোন মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্ব না পেলেও নির্বাচিত হয়েছেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রাণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। এসময় তিনি দল ও দেশের স্বার্থে সরব ছিলেন রাজনীতির মাঠে। রাজনীতির পাশাপাশি একজন পরিবেশ বিজ্ঞানি হিসেবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জলবায়ু সম্মেলনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। পরিবেশে অনন্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক গ্রিন স্টার পদকেও ভূষিত হন তিনি। ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন শিক্ষক।

২০০১ সালে দেশে আসার আগ পর্যন্ত তিনি বেলজিয়ামে শিক্ষকতা করেন এবং সম্প্রতি জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। এর আগে পরিবেশ বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ স্টাডিস বিষয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেন ড. হাছান মাহমুদ। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি খলিলুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘দলের জন্য ত্যাগ ও আস্থার মূল্যায়ন পেয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ। তাঁকে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়াটাই তার প্রমাণ। এক প্রতিক্রিয়ায় ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। এজন্য আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। এলাকার ভোটাররা আমাকে আবারও বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন বলেই এই সম্মান প্রাপ্তি। বিগত ১০ বছর এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে দেশবাসীর দোয়া চাই।’

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব