বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়ায় টেকসই সংস্কার ও সহযোগিতা নিশ্চিতে প্রস্তুতির আশ্বাস দিয়েছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম (UNCT) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির (JSC) দ্বিবার্ষিক সভায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস এই প্রতিশ্রুতি দেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ERD) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘ সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
গোয়েন লুইস বলেন, “বাংলাদেশের জন্য ২০২৩ সাল ছিল চ্যালেঞ্জিং। তবুও দেশের জনগণ আত্মমর্যাদা ও দৃঢ়তা দেখিয়েছে।” তিনি টেকসই অর্থনৈতিক রূপান্তর, জলবায়ু সহনশীলতা, লিঙ্গ সমতা এবং ‘কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে’— এই দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করতে জাতিসংঘের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
সভায় জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামো (UNSDCF) ২০২২–২০২৬ বাস্তবায়নের মূল্যায়ন তুলে ধরা হয় এবং ২০২4 সালের ‘কান্ট্রি রেজাল্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করা হয়। এতে উঠে আসে যে, ২০২৪ সালে জাতিসংঘ ২১ কোটি ৫০ লাখ ডলার বাংলাদেশে উন্নয়ন সহায়তায় ব্যয় করেছে।
এই সহায়তায় তৈরি হয়েছে এলডিসি উত্তরণ কৌশল, সৃষ্টি হয়েছে ৪ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান, উন্নত করা হয়েছে ১১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা এবং ১১ হাজার তরুণ-তরুণীকে দেওয়া হয়েছে ডিজিটাল প্রশিক্ষণ। আরও জানা যায়, অন্তত ৪ কোটি মানুষ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় উপকৃত হয়েছেন, যার মধ্যে শিশু সুরক্ষা কর্মসূচি থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার শিশু লাভবান হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) টিকা কর্মসূচির আওতায় দেশের প্রায় ৫৬ লাখ কিশোরীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এতে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের ৯৩ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
এছাড়া জলবায়ু দুর্যোগে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সহায়তা এবং ১৭ লাখ ২০ হাজার মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা ছড়ানো হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষের মাঝে।
শাসনব্যবস্থার উন্নয়নে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। গ্রামীণ আদালত কার্যকর করতে সহায়তা করা হয়েছে এবং প্রায় ৬ কোটি ১০ লাখ মানুষের কাছে বিচারসেবা পৌঁছানো গেছে।
সভা শেষে জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশের অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করতে UNSDCF কাঠামো এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটি বর্তমান জাতীয় পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইআরডি সচিব।