ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের ৫ম কনভেনশনে বক্তব্য রেখে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে জাতীয় সরকারের গঠন নিয়ে আলোচনার মধ্যে দিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল, “পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠনে কেউ কেন ভয় পায়?”
মুফতি রেজাউল করীম বলেন, পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন হওয়া উচিত এবং এ পদ্ধতি উচ্চকক্ষ কিংবা নিম্নকক্ষের জন্য সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তার মতে, একমাত্র এই পদ্ধতির মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, "জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় এমন সরকার গঠন হয়েছে, তাদের দুর্বলতা কোথায়?" তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করে বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় এবং তারা ক্ষমতায় এসেছে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হওয়া না হওয়ার মধ্যে কোথায় বাধা? এই প্রশ্ন তুলে তিনি বর্তমান সরকারের প্রতি কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি জানান, চাঁদাবাজ এবং খুনিরা এদেশের মানুষের চোখে ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে না।
মুফতি রেজাউল করীমের ভাষ্য ছিল, যারা দেশের মায়ের কোল খালি করেছে, তাদের হাতে ক্ষমতা থাকা দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের এসব কর্মকাণ্ড জনগণ আর সহ্য করতে চায় না। তিনি বলেন, "পাঁচ দশক ধরে যারা দেশের শাসনভার হাতে রেখেছে, তারা নতুন করে কোনো আশা দেখাতে পারবে না। এখন পরিবর্তন আসবে, ইসলামকে ক্ষমতায় আনতে হবে, বাতিলকে পরাজিত করতে হবে।"
এছাড়াও, কনভেনশনে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদকে সভাপতি, ইঞ্জিনিয়ার মারুফ শেখকে সহ-সভাপতি এবং মাওলানা মানছুর আহমদ সাকীকে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের হাতে নতুন নেতৃত্বের ভার তুলে দেওয়া হয়েছে।
কনভেনশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল আউয়াল, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ প্রমুখ। তারা সবাই একসঙ্গে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেন।
বিশেষ অতিথি মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, "৫৩ বছরের লুটপাটে দেশ এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশের জন্য ইসলামিক আদর্শ ও দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।" তার এই বক্তব্য দেশে পরিবর্তনের জন্য নতুন এক দিকনির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা বোঝায়।
ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিনও তাঁর বক্তব্যে আন্দোলনের জন্য যুব নেতাদেরকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "১৯ জুলাই ২০২৪ সালে ইসলামী যুব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের পর আমরা ফ্যাসিস্টদের উৎখাত করে ঘরে ফিরেছি।"
কনভেনশনটি পুরোদিন ধরে চলতে থাকে এবং এতে কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সি, যা অনুষ্ঠানের আনন্দের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। সভায় উপস্থিত অনেকেই নতুন নেতৃত্বে ইসলামী যুব আন্দোলনের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন এবং তারা আশাবাদী যে, এই কমিটি আগামী দিনে বৃহত্তর রাজনৈতিক অঙ্গনে ভূমিকা রাখবে।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হলো যে, তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত এবং তিনি দেশ ও জাতির জন্য পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, ইসলামী আদর্শের প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত দেশ উন্নতির পথে এগোতে পারবে না।
এছাড়াও, পিআর পদ্ধতি নিয়ে তাঁর মন্তব্য দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। গণতন্ত্রের প্রকৃত অর্থে প্রতিষ্ঠা না হলে দেশের মানুষ প্রকৃতভাবে তাদের অধিকার ভোগ করতে পারবে না, এবং এ কারণে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে।
অতএব, মুফতি রেজাউল করীমের এই বক্তব্য এবং কনভেনশনের মাধ্যমে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ একটি নতুন দিশারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। তাদের উদ্দেশ্য শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, বরং দেশের একটি শক্তিশালী এবং ন্যায়সংগত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।