শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আনা বিদেশি মদের ওপর যেন ভাসছে চট্টগ্রাম বন্দর। গত তিন দিনে ছয় কনটেইনার ভর্তি হাজার হাজার বোতল মদ জব্দ করা হয়েছে। জাল নথিপত্র দাখিলের পাশাপাশি কাস্টমস কর্মকর্তার আইডি হ্যাক করে দুই কনটেইনার মদ বন্দর থেকে বের করে আনে একটি চক্র। এদিকে দায় এড়াতে একে অপরকে দুষছে বন্দরকেন্দ্রিক সরকারি সংস্থাগুলো।
অনুসন্ধানে বের হয়ে আসছে, শুল্ক ফাঁকি দিতে পলিস্টার সুতার বদলে কনটেইনার ভরে আনা হয়েছিল বিদেশি মদ। আর এ চালানে ব্যবহৃত সব নথি ছিল জাল। আমদানি পণ্য ছাড় করাতে বিল অব ল্যান্ডিং ছিল জাল আর ইপিজেডের পণ্য হিসেবে বেপজার দেয়া ইমপোর্ট পারমিট বা আইপিও ছিল ভুয়া। পরবর্তীতে ভুয়া আইপি নম্বর ব্যবহার করে অ্যাসেসমেন্ট প্রসেস ছাড়াই কনটেইনারগুলো বন্দর থেকে ছাড় করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বন্দর থেকে বের হওয়ার সময় বাধ্যতামূলক স্ক্যানিং ছাড়া মদ ভর্তি দুইটি কনটেইনার নারায়ণগঞ্জ চলে যায়। এক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়াটি করা হয়েছে একজন কাস্টম কর্মকর্তার আইডি হ্যাকের মাধ্যমে।
শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক এ কে এম সুলতান মাহমুদ বলেন, এর পিছনে কে আছে? কে এ টাকা বিনিয়োগ করেছে? বিদেশ থেকে সুতা আমদানির কথা বলা হয়েছিল। এর আর দাম কত? তার চেয়ে কিন্তু আরও বেশি দামে এ মদ আনা হয়েছে। এলসির মাধ্যমে সুতা আমদানির টাকা গেছে। কিন্তু বাকি টাকা কীভাবে গেল? এক্ষেত্রে অবশ্যই মানি লন্ডারিং হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।
সবশেষ সোমবার (২৫ জুলাই) বিকালে জব্দ হওয়া মদ ভর্তি দুইটি কনটেইনারের আমদানিকারক হিসেবে রয়েছে মোংলা ইপিজেডের ভিআইপি ইন্ডাষ্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড এবং উত্তরা ইপিজেডের ডং জিং ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড। এর আগের চালানগুলো ছিল ইশ্বরদী ইপিজেডের বিএইচকে টেক্সটাইল মিলস। আরেকটি ছিল কুমিল্লা ইপিজেডের নামে।
অপরদিকে শনি (২৩ জুলাই) ও রোববার (২৪ জুলাই) জব্দ হওয়া দুই চালানে তিন কনটেইনার মদের ক্ষেত্রে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে জাফর আহমদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর ঠিকানা দেয়া হয়েছে নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন গোসাইলডাঙা এলাকার। কিন্তু পুরো এলাকা ঘুরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কোনো অফিস পাওয়া যায়নি।
মিথ্যা ঘোষণায় মদ আমদানি করে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার পাশাপাশি ৫০ কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার হয়ে গেছে বলে তথ্য নিশ্চিত করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপ কমিশনার নূর উদ্দিন মিলন।
তিনি বলেন, এগুলো ইমপোর্ট পারমিট পুরোটাই ভুয়া। এছাড়া স্কেনিং করার কথা ছিল। তারা সেটিও করেননি।
তবে আমদানি পণ্য শুল্কায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি সংস্থাগুলো একে অপরের প্রতি দোষারোপ করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তদন্ত হলে কেউই এ দায় থেকে মুক্তি পাবে না বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা হাদী হোসেন বাবুল।
তিনি বলেন, কাস্টমসের কাজই তো স্কেনিং করা। এ কাজ বন্দর কর্তৃপক্ষের না। তো এখানেই তো দায়বদ্ধতা বোঝা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে ২৭ কোটি টাকা মূল্যের একটি রোলস রয়েলস গাড়ি বন্দর থেকে ছাড় করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইপিজেডের আমদানি পণ্যে ডেলিভারিতে বিশেষ সুবিধা থাকায় অবৈধ মালামাল আনার ক্ষেত্রে চক্রটি এ প্রক্রিয়াকেই টার্গেট করছে বলে মনে করেন কাস্টম কর্মকর্তারা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।