ডিএমপিতে ঝুলছে ৪০ হাজার গ্রেফতারি পরোয়ানা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার ৮ই এপ্রিল ২০২২ ১০:২০ অপরাহ্ন
ডিএমপিতে ঝুলছে ৪০ হাজার গ্রেফতারি পরোয়ানা!

রাজধানী ঢাকার অর্ধশত থানায় প্রায় ৪০ হাজারের বেশি গ্রেফতারি পরোয়ানা ঝুলে আছে। এর মধ্যে জিআর (সাধারণ নিবন্ধন) মামলার ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারি পরোয়ানার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এছাড়া সিআর (কোর্ট নিবন্ধন) মামলার ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারি পরোয়ানা ঝুলে আছে প্রায় ১২ হাজার। এর বাইরে জিআর ও সিআর মামলায় নয় হাজারেরও বেশি গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট ঝুলে থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এমন অবস্থায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার সম্প্রতি ডিএমপি’র আটটি ক্রাইম বিভাগকে ওয়ারেন্ট তামিলের হার বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।


পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যেকোনও ধরনের ওয়ারেন্ট তামিলে সফলতা অর্জন করতে না পারলে অপরাধ ব্যবস্থাপনায় সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ২৩ ধারায়ও উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সব ধরনের পরোয়ানা জারি ও দ্রুত কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে।


সূত্র জানায়, ডিএমপি’র ৫০টি থানায় গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩২ হাজার ৫১টি ওয়ারেন্ট ঝুলে ছিল। এর মধ্যে জিআর মামলার পরোয়ানা ২০ হাজার ২৩৪টি এবং সিআর মামলার পরোয়ানা ১১ হাজার ৮১৭টি। সাজা ওয়ারেন্ট ছিল ৯ হাজার ৩০৭টি। এর মধ্যে ডিএমপি’র মিরপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি গ্রেফতারি পরোয়ানা ঝুলে রয়েছে। ডিএমপির এই ক্রাইম বিভাগে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার গ্রেফতারি পরোয়ানা ঝুলে আছে। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে তেজগাঁও বিভাগ। ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগে প্রায় ৮ হাজার ওয়ারেন্ট ঝুলে রয়েছে।


এ প্রসঙ্গে জানতে ডিএমপি’র মিরপুর ও তেজগাঁও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই উপ-কমিশনারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


ডিএমপি’র মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ওয়ারেন্ট তামিল করে আসছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি ওয়ারেন্ট তামিলকে প্রাধান্য দেই। থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি তদারকি করে থাকেন। কিন্তু প্রতিমাসেই তামিলের চেয়ে নতুন ওয়ারেন্ট বেশি হওয়ায় কিছু এখনও ঝুলে আছে। আমরা সব ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।’


সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ওয়ারেন্টের আসামি গ্রেফতার না হওয়ার পেছনে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাব ও আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে। ওয়ারেন্ট তামিলের নামে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগও পুরনো। এছাড়া আসামিদের কেউ প্রভাবশালী হলেও ওয়ারেন্ট ঝুলে থাকে।


মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, প্রতি মাসেই নতুনভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা আসে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেই আসামিরা নিজের এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে আত্মগোপন করে থাকে। এ কারণে গ্রেফতারি পরোয়ানাগুলো তামিল করা যায় না। মাঠ পর্যায়ের পুলিশের দৈনন্দিন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ওয়ারেন্ট তামিলের বিষয়ে সময় দিতে হয়।


সম্প্রতি ডিএমপি সদর দফতরে অনুষ্ঠিত অপরাধ পর্যালোচনা সভায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ঝুলে থাকার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। ওয়ারেন্ট তামিল বা নিষ্পত্তির হার বাড়াতে ডিএমপি কমিশনার কয়েকটি নির্দেশনাও জারি করেন। এরমধ্যে থানাভিত্তিক এসআই ও এএসআইদের মাসিক টার্গেট নির্ধারণ করে দেওয়া ও ত্রৈমাসিক কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে তিরস্কার ও পুরস্কার প্রদান করা; থানাভিত্তিক ইন্সপেক্টর অপারেশনের নেতৃত্বে ও জোনাল সহকারী কমিশনারের তদারকিতে কমিটি গঠন করা, ওয়ারেন্ট তামিলে আশাব্যঞ্জক ফল অর্জনে ব্যর্থ হলে থানার অফিসার ইনচার্জসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ও এ বিষয়ে সতর্ক করার কথা বলা হয়েছে।


এছাড়া ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ওয়ারেন্টের আসামির ঠিকানা পরিবর্তন করলে সিআইএমএস-এ রক্ষিত তথ্যাদি কাজে লাগিয়ে এবং ফোন নম্বর বা জাতীয় পরিচয়পত্র কাজে লাগিয়ে আসামির অবস্থান শনাক্ত করতে হবে। সিআর মামলার ক্ষেত্রে বাদীর মাধ্যমে আসামির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুরনো মামলার ক্ষেত্রে মামলার সবশেষ অবস্থা জেনে আদালতের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ওয়ারেন্ট তামিলে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করারও নির্দেশনা দেন পুলিশ কমিশনার।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জুডিশিয়ারি সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানান, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও সমাজে স্থিতিবস্থা বজায় রাখতে ওয়ারেন্ট তামিল করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ আদালতের কাছে প্রাথমিকভাবে অপরাধ গণ্য হওয়া মাত্রই ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। কিন্তু মাসের পর মাস যদি সেই আসামি বা অভিযুক্ত গ্রেফতার না হয় তাহলে সমাজে অস্থিতিশীলতা বাড়ে। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ে। ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে, যা সর্বজনীনভাবে আইনের শাসনের ওপর আঘাত হানে।