লকডাউন: রঙ তুলির বদলে হাতে এখন রিকশার হ্যান্ডেল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার ৩০শে জুলাই ২০২১ ০৮:১০ অপরাহ্ন
লকডাউন: রঙ তুলির বদলে হাতে এখন রিকশার হ্যান্ডেল

বরিশাল প্রতিনিধি ॥ ‘মুসকান জাহান নামের আমার দুই বছরের একটা কন্যা সন্তান আছে। মেয়েটাকে গত তিনদিন থেকে দুধ কিনে দিতে পারছি না। দুধের জন্য বাচ্চাটা খুব কান্নাকাটি করে। ওর কান্না দেখে আর ঘরে থাকতে পারিনি। তাই ভাড়ায় একটি রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। 




কথাগুলো বলছিলেন, পেশায় একজন আর্টিস্ট মাহাবুব আলম। করোনার প্রবল আঘাত আর কঠোর লকডাউনের বাধ্যবাধকতায় আর্টিস্ট মাহাবুব এখন রিকশাওয়ালা। 



নগরীর কালীবাড়ি রোডের জগদীশ স্বারস্বত গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশেই মাহাবুবের আর্টের দোকান। লকডাউনের কারণে দোকান বন্ধ। যতোটুকু পুঁজি ছিলো তা ঘরে বসেই শেষ করেছেন। 




দীর্ঘদিন থেকে অর্ধাহারে চলছে তাদের স্বামী-স্ত্রী ও এক মেয়ের সংসার। তারপরেও মান-সম্মানের ভয়ে ঘরে ছিলেন। কিন্তু দুধের জন্য শিশু কন্যার কান্নায় আর ঘরে থাকতে পারেননি মাহাবুব আলম। দিনে লোকলজ্জায় বের না হলেও রাতে রিকশা নিয়ে নেমেছেন নগরীতে।




বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কথা হয় মাহবুব আলমের সাথে। রিকশার হ্যান্ডেল ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, পারেন না পেশাদার রিকশাচালকের মতো প্যাডেল ঘুরাতে। 



কিছু না জানলেও শুধু জানেন ঘরে বাজারের টাকা নেই, শিশু কন্যার দুধ নেই। এসব কিনতে হলে তাকে প্যাডেল ঘুরাতেই হবে।



কথা বলতে বলতে অঝোড়ে কাঁদেন ১৯৯১ সালে এসএসসি পাস করা মাহবুব আলম। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলেন, আমার করুণ অবস্থার কথা কারো কাছে বলতেও পারি না, আবার দুই হাত বাড়িয়ে সাহায্যও চাইতে পারছিনা। 



তিনি আরও বলেন, আমি একজন আর্টিস্ট। এই দুই হাত দিয়ে মানুষের শখের ছবি আঁকি। আমার হাতে ছিলো রঙ তুলি। এখন সেই হাতে রিকশার হ্যান্ডেল ধরেছি।




করোনা আর লকডাউন তাকে (মাহাবুব) ধ্বংস করে দিয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমার দোকানের নাম মাহাবুব আর্ট। ওখানে সাইনবোর্ড, কম্পিউটার সিল, পাথর খোঁদাই, টাইলস খোঁদাইয়ের কাজ করতাম। 




কঠোর লকডাউনের কারণে দোকান খুলতে পারছিনা। তাই আয় রোজগার না থ্কাায় পরিবার নিয়ে খুব করুণ অবস্থায় দিনাতিপাত করছি।




এ ব্যাপারে জেলা সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, জেলা প্রশাসন এবং সমাজসেবা থেকে অসংখ্য মানুষকে সহায়তা করা হচ্ছে। মাহাবুব আলমের খোঁজখবর নিয়ে আমরা তাকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেব।