কিডনি বিক্রি করতে বরিশালের রাস্তায় করোনায় ঋণগ্রস্ত লেখক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সোমবার ২৮শে জুন ২০২১ ০৫:২১ অপরাহ্ন
কিডনি বিক্রি করতে বরিশালের রাস্তায় করোনায় ঋণগ্রস্ত লেখক

মহামারি করোনার সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে অন্যদের মতো মুক্তিযুদ্ধের গল্প লেখক, শিশু সাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী সাইফুল্লাহ নবীনের উপার্জনের সব পথ হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। হিমশিম খাচ্ছেন সংসার চালাতে, হয়ে পড়েছেন ঋণগ্রস্ত। শেষ পর্যন্ত এখন দিশেহারা হয়ে নিজের কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খ্যাতিমান এই লেখক। 





গত রবিবার ২জ৭ জুন বরিশাল নগরীর অশি^নী কুমার হলের সামনে কিডনি বিক্রির প্লাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন সাইফুল্লাহ নবীন। 





প্লাকার্ডে লেখা ছিল ‘করোনা! দুই বছরের কাছাকাছি, অসহায় মানুষ, অসহায় আমি। কাজ নেই, কর্ম নেই। ৩ লাখ টাকা ঋণী। ঋণ পরিশোধ করতে কিডনি বিক্রি, রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ’। 




সাইফুল্লাহ নবীনের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার চরহোগলা গ্রামে। তিনি গল্প লেখার পাশাপাশি ঢাকায় বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলায় বর্ণমালা শিল্প ও স্টল সাজসজ্জার কাজ করতেন। তার প্রকাশিত ৪৯টি বই বাজারে রয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ১০টি, শিশুতোষ গল্পের বই ২১টি, উপন্যাস ১৪টি এবং শিশুদের ছবি আাঁকারে বই রয়েছে চারটি। 




লেখক সাইফুল্লাহ নবীন জানান, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে উপার্জনের সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বই বিক্রি শূন্যের কোটায়। বই লেখার সম্মানির টাকাও দিচ্ছেন না প্রকাশকরা। সাইনবোর্ড বা ছবি আঁকার কাজও নেই। প্রায় দুই বছর ধরে এমন অবস্থা চলছে। 





আর্থিক সঙ্কটের কারণে জমি বন্ধক রেখে এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ধারদেনা করে এতদিন সংসার চলেছে। কিন্তু এখন তিনি নিরূপায়। দুই বছর ধরে সংসারে শুধু অভাব-অনটন। 





তিনি বলেন, এতো দিন সব সময় হাসিমুখে থাকতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু আর পারলাম না। মনোবল ভেঙে যাচ্ছিল। এখন তো কোনো কুলকিনারা পাচ্ছি না। একে তো ছেলে-মেয়ের দুবেলা খাবার জোটানো নিয়ে চিন্তা, সঙ্গে পাওনাদারদের টাকার দুঃশ্চিন্তা যোগ হয়েছে। 





সব মিলিয়ে জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দিশেহারা হয়েই তিনি শেষ পর্যন্ত একটি কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। 




প্রসঙ্গত, লেখক সাইফুল্লাহ নবীনের একার উপার্জনে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে পড়ালেখা করেন। বড় ছেলে বিএসসিতে, একমাত্র মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে এবং ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।