আশাশুনিতে লকডাউনে এনজিওর চাপে দিশেহারা গ্রাহকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষিরা
প্রকাশিত: বুধবার ৯ই জুন ২০২১ ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন
আশাশুনিতে লকডাউনে এনজিওর চাপে দিশেহারা গ্রাহকরা

আশাশুনিতে চলছে এখন বিশেষ বিধিনিষেধ। মানুষ যেতে পারছে না ঘরের বাইরে। নেই তেমন কাজ কর্ম। অন্য দিকে  এনজিও কর্মীদের ঋণ পরিশোধের গোপন চাপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সাধারণ ঋণ গ্রহিতারা। 



লকডাউনের কারণে এসব ঋণ গ্রহিতারা যখন খাদ্য ও দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা সংকটে স্বাভাবিক জীবন যাপনে হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে এনজিও’র ক্রমাগত চাপে দিশেহারা হতে চলেছে। 



মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকায় এনজিও কর্মীরা সরাসরি ফিল্ড কালেকশন না করলেও বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে কিস্তি পরিশোধের চাপ প্রয়োগ করছে।  চলমান লকডাউনে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়লেও এনজিও কর্মীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না তারা। 



জানাগেছে, চলতি বছরের ১২ এপ্রিল মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ করোনার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি, আধা সরকারি, বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। 



পরে উক্ত প্রজ্ঞাপনের সময়সীমা বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে ৫ মে, ১৬ মে ও ৬জুন থেকে ১০দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের এ নির্দেশনাকে অমান্য করে উপজেলার কয়েকটি এনজিও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বাজার ও পল্লী এলাকায় ঋণ পরিশোধের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গোপন চাপ প্রয়োগ করছেন  বলে অভিযোগ করেন ঋণ গ্রহীতারা। 



লকডাউনের সময় ঋণ পরিশোধের কিস্তি না দিলে পরবর্তীতে সে গ্রাহকদের আর কোন ঋণের আবেদন পাশ হবেনা, এমনই অজুহাত দেখিয়ে ঋণ আদায়ের কার্যক্রম সফল করা হচ্ছে। 



প্রতিবাদ করলে ঋণ পরিশোধের পর তারা হারাবেন তাদের সদস্য পদ এমন হুমকির অভিযোগ উঠেছে এনজিও কর্মীদের বিরুদ্ধে। উপায় না পেয়ে নিয়ম অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের জন্য দিতে হচ্ছে কিস্তি। তবে লেনদেন ঠিকঠাক থাকলেই তারা পাচ্ছেন নতুন ঋণ। 



বুধহাটা বাজার শাখার ‘ইডা’ এনজিও-র সদস্যার স্বামী বুধহাটা গ্রামের বাবু হোসেন বলেন, লকডাউনে কিস্তি বন্ধ থাকলেও প্রতিনিয়ত ইডা এনজিও কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে।



 সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু ইডা এনজিও নয়, একই সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে কিস্তি আদায়ে চাপ প্রয়োগ করছে সাস, আশা, জাগরনি চক্র,আরআরএফ, গ্রামীণ ব্যাংক, টিএমএসএসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের এনজিও প্রতিষ্ঠান। 



এসকল এনজিও প্রতিষ্ঠানের ঋণ গ্রহীতার স্বামী আশাশুনি সদরের শাহিনুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম, ওবায়দুল ইসলাম ও সদস্যা রোজিনা পারভিন ময়না বলেন, এসকল এনজিও প্রতিষ্ঠানকে কিস্তির টাকা না দিলে দফায় দফায় বাড়িতে আসছে। যেখানে দু-বেলা ভালভাবে খেতেই পারি না, সেখানে কিস্তি পরিশোধ করবো কি করে। 



জাহিদুল ইসলাম জানান, এনজিও কর্মীদের যন্ত্রণায় দোকানে ঠিকমত বসতেও পারছি না। কিস্তির টাকা দিতে না পারলে সমপরিমান অর্থের মাল নিচ্ছে এনজিও কর্মীরা। সব মিলিয়ে চলমান লকডাউনে এনজিও কর্মীদের গোপন চাপে পিষ্ট হচ্ছেন সাধারণ ঋণ গ্রহীতারা। 



এসকল এনজিও কর্মীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী ঋণ গ্রহীতারা। 



এব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এনজিও সমন্বয় কমিটির সভাপতি নাজমুল হুসাইন খান বলেন, আইন অমান্য করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অমান্যের নির্দিষ্ট অভিযোগ বা প্রমান পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।