প্রকাশ: ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৩৩
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ০১-এ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ভোট ব্যালট বাক্সে অনিয়ম করার পরামর্শ দেওয়ার কথা জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন প্যানেলের সামনে তিনি সাক্ষ্য দেন।
মামুন বলেন, ওই সময়ের পুলিশ মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ভোটের ৫০ শতাংশ ব্যালট বাক্সে ভর্তি রাখার। তিনি এই সময়ে জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন এবং ট্রাইব্যুনালে আসামি থেকে রাজসাক্ষী হিসেবে সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করছেন।
জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি আরও জানান, আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে হয়। লেথাল উইপেন ব্যবহারের নির্দেশনা আসছিল শেখ হাসিনার কাছ থেকে। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব এবং ডিবি কর্মকর্তা হারুন মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতিউৎসাহী ছিলেন।
তিনি বলেন, র্যাব-১ এ টিআইএফ নামে একটি গোপন বন্দিশালা ছিল। অন্যান্য র্যাব ইউনিটেও অনুরূপ বন্দিশালা থাকত। রাজনৈতিক ভিন্নমত বা সরকারের জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য ব্যক্তিদের এখানে আটক করা হতো। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও নিয়মিত এসব নির্দেশনা আসত। কখনও কখনও নির্দেশ দিতেন তারেক সিদ্দিকী। আয়নাঘরে আটক ও ক্রসফায়ারে হত্যার মতো ঘটনা র্যাবের এডিসি অপারেশন ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক পরিচালনা করতেন।
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এ বছরের ২৪ মার্চ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, স্বেচ্ছায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে তিনি সত্য উদঘাটন করতে চাইছেন।
এর আগে এই মামলায় জুলাই আন্দোলনের সময় আহত, শহীদ পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকসহ ৩৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রসিকিউশন আশা করছে এ মাসের মধ্যেই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হবে।
মামুনের এই জবানবন্দি রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় পুলিশের কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচনী অনিয়মের তথ্য উন্মোচন করেছে। তিনি আদালতে স্পষ্ট করেছেন যে, রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা অনুযায়ী অনেক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও ভোটপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতায় প্রভাব ফেলেছে।
এই ঘটনা দেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, সরকারি দফতরের নির্দেশনা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্ন তুলেছে। সমাজের বিভিন্ন অংশ এই তথ্যের গুরুত্ব ও ভবিষ্যতে ন্যায্য নির্বাচন নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।