প্রকাশ: ৬ মে ২০২৫, ১৯:৮
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এ তথ্য জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশে অনলাইন জুয়াকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সাইবার স্পেসে নারী ও শিশুদের প্রতি নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।
আগের সাইবার নিরাপত্তা আইনের কুখ্যাত ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে নতুন খসড়ায়। এই ধারাগুলোতেই আগে ৯৫ শতাংশ মামলার উদ্ভব হয়েছিল। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এসব ধারা অনুসারে দায়েরকৃত মামলাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সংশোধিত অধ্যাদেশে ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো এবং সেই ঘৃণা থেকে সহিংসতা উসকে দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এতে ধর্মীয় মতপ্রকাশ বা সমালোচনার স্বাধীনতায় যেন বাধা না আসে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে ‘ধর্মীয় ঘৃণা’র সংজ্ঞা কঠোরভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া নারীর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক কনটেন্ট প্রচার বা হুমকি প্রদানের মতো অপরাধকেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই দুটি অপরাধ ছাড়া মতপ্রকাশের অন্য কোনো ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করা যাবে না বলে স্পষ্ট করা হয়েছে।
অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সাইবার অপরাধ সংঘটনের বিষয়টিকে শাস্তিযোগ্য হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মামলার প্রক্রিয়াতেও বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যদি কেউ মতপ্রকাশের উল্লিখিত দুটি অপরাধের কারণে মামলায় অভিযুক্ত হয়, তবে ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে প্রাথমিক শুনানিতে মামলাটি বাতিল করতে পারবেন। চার্জশিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।
আইন উপদেষ্টা জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া উপস্থাপন করা হয়েছে এবং কিছু সংশোধনের পর এটি গেজেট আকারে এই সপ্তাহেই প্রকাশ হতে পারে।