মৌলভীবাজারে পানিবন্দি দুই লক্ষাধিক মানুষ, নৌকা ও শুকনো খাবারের সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক
এহসান বিন মুজাহির জেলা প্রতিনিধি , মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: বুধবার ২১শে আগস্ট ২০২৪ ০৭:৪৩ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজারে পানিবন্দি দুই লক্ষাধিক মানুষ, নৌকা ও শুকনো খাবারের সংকট

গত তিন দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, জুড়ী, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার প্রায় তিন শতাধিক' গ্রাম। রাস্তাঘাট থেকে ঘরবাড়ি কিছুই রেহাই পায়নি বানের জলে। ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মৌলভীজেলার জেলার চার উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ। নৌকা ও শুকনো খাবার সংকটে পানিবন্দি মানুষেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। 


মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী আজ বুধবার (২১ আগস্ট) জেলার মনু নদী (রেলওয়ে ব্রীজ) বিপৎসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার, চাঁদনীঘাট এলাকায় ৭০ সেন্টিমিটার ধলাই নদীতে ৮ সেন্টিমিটার ও জুড়ী নদীতে বিপদসীমার ১৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানিও বিপৎসীমা স্পর্শ করেছে। এখনও প্রবল স্রোতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। 


স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে একাধিক স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে উজানের পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর, আদমপুর, মাধবপুর, কমলগঞ্জ, শমসেরনগর, রহিমপুর, পতনঊষা, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে উপজেলার বেশিরভাগ সড়ক।


দেখা যায়, কমলগঞ্জ-আদমপুর আঞ্চলিক সড়কের ঘোড়ামারা ও ভানুবিল মাঝেরগাঁও এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। আদমপুর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা, রানিরবাজার, ইসলামপুর ইউনিয়নের মোকাবিল ও কুরমা চেকপোস্ট এলাকায় নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। আদমপুর-ইসলামপুর সড়কের হেরেঙ্গা বাজার, শ্রীপুর ও ভান্ডারিগাঁও এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।


কুলাউড়ায় বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার টিলাগাঁও, জয়চণ্ডী, সদর, রাউৎগাঁও ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। সড়ক পথেও অনেক গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। 


এদিকে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পানিবন্দিদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং উজান থেকে নেমে আসা পানিতে জেলার সব কটি নদনদীতে পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছে মৌলভীবাজারের পাউবো।


সংশ্লিষ্টরা জানান, টানা বর্ষণে মনু ও ধলাই নদীর অন্তত ৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের সহস্রাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জুড়ী উপজেলার ফুলতলা, গোয়াবাড়ি ও সাগরনাল ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম। ৪০ হেক্টরের বেশি আমন ধান জলমগ্ন হয়ে ডুবে গেছে। রাজনগর উপজেলার মনু নদীর বাঁধ ভেঙে টেংরা ও তারাপাশা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ও চাঁদনীঘাট ইউনিয়নেরও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে বন্যা হয়েছে।


এদিকে, বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা ও নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযানে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে আসলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন জোরালোভাবে মাঠে না থাকায় বিগত বন্যার মতো পানিবন্দিরা সহযোগিতা পাচ্ছেন না। অনেক নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারছেন না বলেও একাধিক অঞ্চলের ভোক্তভুগিরা  জানিয়েছেন।


জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আটটি স্থান দিয়ে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মনু নদীরও বাঁধ ভেঙে গেছে। ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টি হওয়াতে নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে পানি নেমে যাবে। এ ছাড়া যেসব স্থানে বাঁধ ভেঙেছে সেগুলোতে কাজ চলমান বলেয়েছে বলে তিনি জানান।  


এদিকে দিনব্যাপী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে বলে প্রশাসন ধারণা করছে। নতুন নতুন করে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।