বরিশালে লোডশেডিং না থাকলেও রয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: রবিবার ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৪:৩৫ অপরাহ্ন
বরিশালে লোডশেডিং না থাকলেও রয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ভোগান্তি

বরিশালে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় বেশি সরবরাহ থাকায় লোডশেডিং না থাকলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ভোগান্তিতে রয়েছেন ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) গ্রাহকরা। দিনে অন্তত ৬ থেকে ৭ বার বিদ্যুৎ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গ্রাহকদের। মান্ধাতা আমলের জরাজীর্ণ ট্রান্সফরমার দিয়ে চলছে বরিশাল বিদ্যুৎ বিভাগের গ্রাহক সেবা। যার কার্যক্ষমতা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে ব্যাহত হচ্ছে গ্রাহক সেবা। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সাপ্লাই থাকা সত্ত্বেও গ্রাহকরা এর সুফল ভোগ করতে পারছেন না। তবে এক-তৃতীয়াংশ ট্রান্সফরমার নতুন দাবি করে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, প্রকল্প ২০৩০ এর পর এ সমস্যা থাকবে না।


জানা যায়, বরিশালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ডিভিশন-১ ও ২ এ ৮ শতাধিক ট্রান্সফরমার রয়েছে। যার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার। আর এ গ্রাহকদের বিদ্যুৎসেবা দিয়ে থাকেন ১০০ ও ২০০ কেবিএ ট্রান্সফরমার দিয়ে। দুই ডিভিশনে ১০০ কেবিএ ট্রান্সফরমার রয়েছে ৩৫০টি আর ২০০ কেবিএ ট্রান্সফরমার রয়েছে ৪৬০টি। বিদ্যুৎ বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১০০ কেবিএ একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে সর্বোচ্চ ৮০ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সেবা দিতে পারে। 


অপরদিকে ২০০ কেবিএ একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে ১৮০ জন গ্রাহককে সেবা দেয়া সম্ভব। দুই ট্রান্সফরমারের হিসাব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৭ হাজার গ্রাহককে সেবা দেয়া সম্ভব। ওজোপাডিকোর দুই ডিভিশন মিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৪০০ মেগাওয়াট। প্রয়োজনীয় সাপ্লাই থাকা সত্ত্বেও যান্ত্রিক ত্রæটির জন্য গ্রাহকরা অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছেন। দিনে ৫-৬ বার বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়তে হয় গ্রাহকদের। এতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন কলকারাখানার শ্রমিকরা। বিদ্যুৎ না থাকায় তারা কাজ বন্ধ করে রাখছেন। এছাড়া সংবাদকর্মীরাও পড়ছেন বিপাকে।


কারণ হিসেবে জানা যায়, এখানে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমারগুলো অনেক পুরনো। এছাড়া প্রতিটি ট্রান্সফরমারে থাকা আর্থিং মান্ধাতা যুগের। যার কার্যক্ষমতা বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে। সেগুলো জোড়াতালি দিয়েই চলছে গ্রাহক সেবা। বরিশালের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ট্রান্সফরমারই বৃষ্টির পানিতে মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। সেগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। ফলে জোড়াতালি দেয়া ওই সব ট্রান্সফরমার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যা থেকে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন খোদ বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী-কর্মকর্তারা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বরিশালে যে ট্রান্সফরমারগুলো রয়েছে তার বেশির ভাগই পুরনো এবং ত্রæটিপূর্ণ। তিনি বলেন, নতুন সংযোগ নেয়ার সময় ২ কিলোওয়াট লোড নিলেও প্রায় গ্রাহকই ৫-৭ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। যার কারণে লোড পড়ছে ট্রান্সফরমারগুলোতে। আর লোড নিতে না পারায় পুড়ে যাচ্ছে জরাজীর্ণ আর্থিং। আর তা মেরামতের জন্য ট্রান্সফরমারে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কাজ করা হয়। ওই সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয় বলে দাবি করেন তিনি।


ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এস.ই) এটিএম তরিকুল ইসলাম বলেন, বরিশালে চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকায় লোডশেডিং নেই। মাঝে মাঝে সঞ্চালন লাইনে ত্রæটির কারণে মেরামত করা প্রয়োজন হয়। তবে জরাজীর্ণ ট্রান্সফরমারগুলো ধীরে ধীরে পরিবর্তন করা হচ্ছে। এছাড়া কিছু কিছু স্থানে আর্থিং পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রকল্প ২০৩০ বাস্তবায়নের পর বিদ্যুতের সমস্যা থাকবে না বলেন তিনি।


 এদিকে বরিশালে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৬ লাখ ১৮ হাজার গ্রাহকের চাহিদার পুরোটাই সাপ্লাই থাকলেও সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১-২ ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির বলেন, সমিতি-১ এর আওতায় ৩ লাখ ২০ হাজার গ্রাহকের দিনে ৩৫-৪০ এবং রাতে ৫০-৫৪ মেগাওয়াটের চাহিদা রয়েছে। চাহিদার বিপরীতে পুরোটাই আমরা পাচ্ছি। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিনে ও রাতে সর্বোচ্চ ১-২ ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে।


বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক মৃদুল কান্তি চাকমা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতায় গ্রাহক সংখ্যা ২ লাখ ৯৮ হাজার। দিনে চাহিদা থাকছে ২৫-২৭ মেগাওয়াট। রাতে চাহিদা বেড়ে হচ্ছে ৫৪-৫৮ মেগাওয়াট। তবে গ্রিড থেকে সেই পরিমাণই বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত মিলিয়ে এক থেকে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এটা সহনীয় পর্যায়ের মধ্যে পড়ে।