সমস্যায় জর্জরিত হিলি ও ডাঙ্গাপাড়া রেলস্টেশন, সেবা বঞ্চিত যাত্রীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৫শে অক্টোবর ২০২২ ০৬:১৪ অপরাহ্ন
সমস্যায় জর্জরিত হিলি ও ডাঙ্গাপাড়া রেলস্টেশন, সেবা বঞ্চিত যাত্রীরা

দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলিতে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ স্থলবন্দর। প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে বিভিন্ন পণ্য ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়া চেকপোস্ট দিয়ে দুই দেশে যাতায়াত করেন শতশত পাসপোর্টধারী যাত্রী। কিন্তু এই উপজেলায় দুটি রেল স্টেশন থাকলেও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যাত্রীরা।  

 

হাকিমপুর উপজেলায় দুটি রেলস্টেশনের একটি হিলি ও অন্যটি ডাঙ্গাপাড়া স্টেশন। এর মধ্যে ডাঙ্গাপাড়া রেল স্টেশনটির সব কার্যক্রম প্রায় ২০ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পণ্য আনা নেওয়া এবং যাত্রী সেবার জন্য হিলি ও ডাঙ্গাপাড়া রেল স্টেশন দুইটি চালু করে ব্রিটিশ সরকার। এক সময় দুইটি স্টেশন ছিলো জাঁকজমক। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় স্থবির হয়ে পড়তে শুরু করে হিলি রেল স্টেশনটি। বর্তমানে এই স্টেশনে রাজশাহীগামী ইন্টারসিটি এবং খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ও রকেট মেইল ট্রেন যাত্রাবিরতি করে। তবে ঢাকাগামী কোনো ট্রেন এই স্টেশনে থামে না। এই বন্দরের যাত্রীদের পার্শ্ববর্তী বিরামপুর ও পাঁচবিবি উপজেলা স্টেশন থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে উঠতে হয়।


হিলি বন্দরে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে ছুটে আসেন এই বন্দরে ব্যবসা করতে। কিন্তু রেল সুবিধা না থাকায় সড়ক পথে যাতায়াত করতে হয় তাদের। একই সঙ্গে ঢাকা অধ্যায়নরত উপজেলার সব ছাত্র-ছাত্রীরা রেলসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।


এদিকে ২০ বছর পূর্বে ডাঙ্গাপাড়া রেলস্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিরামপুরের পশ্চিমে এবং নবাবগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণের মানুষসহ হিলির অধিকাংশ বাসিন্দারা একসময় এই ডাঙ্গাপাড়া রেলস্টেশনটি ব্যবহার করতেন। জাঁকজমক ছিলো এই অঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য। প্লাটফর্ম রয়েছে, আছে অফিস, রয়েছে কোয়াটার, শুধু দাঁড়ায় না ট্রেন। এলাকাবাসীর দাবি সরকার আবারও যদি ডাঙ্গাপাড়া রেলস্টেশনটি চালু করতো তাহলে স্থানীয় বাসিন্দারা অনেক উপকৃত হতেন। 


ডাঙ্গাপাড়া বাজারের মতিয়ার রহমান বলেন, ২০ বছর আগে আমাদের যাতায়াতের কোন অসুবিধা হতো না। এই স্টেশন সব ট্রেন দাঁড়াতো। এখান থেকেই দেশের সব স্থানে যেতে পারতাম। বর্তমান আমরা বাসে করে বিরামপুর স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরি। সরকার যদি আমাদের রেলস্টেশনটি আবারও চালু করে দেন তাহলে আমদের অনেক উপকার হবে।


হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ভারত থেকে আসা নাড়ু গোপাল, প্রদীপ কুমার ও জীবন দাসসহ কয়েক জন পাসপোর্টধারী যাত্রী বলেন, বাংলাদেশে আমাদের আত্মীয়-স্বজন আছে। আমরা মাঝেমধ্যে হিলি চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। কিন্তু এখানকার রেলস্টেশনে কোনো ট্রেন পাই না। আমাদের বিরামপুর কিংবা জয়পুরহাট গিয়ে ট্রেন ধরতে হয়। এতে আমাদের অনেক ভোগান্তি ও হয়রানি পোহাতে হয়।


হাকিমপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন, হিলির দুইটি স্টেশনই খুবই গুরুত্বপূর্ণ, দু'টিরই বেহাল দশা। সরকার হিলি স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে বছরে কয়েকশো কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের হিলিবাসীর ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন নেই, আমরা দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে রয়েছি। এই স্টেশনে মাত্র রাজশাহীগামী তিনটি ট্রেন দাঁড়ায়। ঢাকাগামী কোনো ট্রেনের স্টপেজ নেই। ছেলে-মেয়েরা ঢাকায় লেখাপড়া করে তাদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অন্যদের বিষয়টি তো বাদ দিলাম। সরকারের নিকট আমাদের আকুল আবেদন অতিদ্রুত এই স্টেশনে যেন সব ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা করা হয়।


হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, হিলি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর স্থলবন্দর এবং দিনাজপুর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এই বন্দর রেলস্টেশনে ঢাকাগামী ট্রেনগুলো দাঁড়ায় না। আমরা রেল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা জানিয়েছেন অচিরেই সকল ট্রেন দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করবেন।


ডাঙ্গাপাড়া রেলস্টেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, জনবলের অভাবে স্টেশনটির সব কার্যক্রম কর্তৃপক্ষ বন্ধ রেখেছেন। জনবল বৃদ্ধি করে আবারও স্টেশনের কার্যক্রম স্বাভাবিক করবেন রেল কর্তৃপক্ষ।


এবিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের জেনারেল ম্যানেজার অসিত কুমার তালুকদার বলেন, আপাতত হিলি রেলস্টেশনে ঢাকাগামী কোনো ট্রেন থামানোর সিদ্ধান্ত নেই। পার্শ্ববর্তী বিরামপুর-পাঁচবিবিতে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ রয়েছে। তবে আগামীতে রেলে নতুন ট্রেন চালু হলে বিষয়টি দেখা হবে।


তিনি আরও বলেন, সীমান্ত রক্ষিবাহিনীর নিরাপত্তার জন্য পণ্যবাহী ট্রেনগুলোর স্টপেজ তুলে নেওয়া হয়েছে। সৈয়দপুর এবং বিরামপুরে মালবাহী ট্রেনের কার্যক্রম চলছে।


অসিত কুমার তালুকদার ডাঙ্গাপাড়া রেলস্টেশনের বিষয়ে বলেন, লোকবলের অভাবে মাঝেমধ্যে রেলস্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিষয়টি বিবেচনায় থাকলো, যদি তদন্তে স্টেশনটি চালু করার প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা বিষয়টি দেখবো।