আম্ফানে বিধ্বস্ত আশাশুনির ২২ গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষিরা
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৩শে জুন ২০২২ ০৬:১০ অপরাহ্ন
আম্ফানে বিধ্বস্ত আশাশুনির ২২ গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে

আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলায় আম্ফানের তা-বে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় উন্নয়ন সম্ভব না হওয়ায় এলাকাবাসী নিদারুন ভোগান্তিতে রয়েছে। 


আম্ফানের প্রভাবে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাসে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে শ্রীউলা ইউনিয়নের ২২ গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। এরপর একবছর যাবৎ জোয়ার-ভাটার ধ্বংসাত্মক থাবায় ইটের সোলিং ও কাঁচা রাস্তা ভেসে যায়। প্রায় ৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দে নির্মানাধীন আশাশুনি টু কোলা-ঘোলা সড়কের ৫টি পয়েন্ট আম্ফানের ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি। ইটের সোলিংয়ের ইট সেই থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাস্তার দু’ধারে পড়ে আছে। বেশিরভাগ রাস্তার অবস্থা এমন খারাপ যে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে মোটরসাইকেল ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই। তাও সবখানে নির্বিঘেœ যাতয়াতের সুযোগ বঞ্চিত রয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই যদি রাস্তাগুলি সংস্কার করা না হয়, তাহলে গত বছরের মত প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজনকে ঘরের মধ্যে আটকেই মানবেতর জীবন-যাপন করতে হবে । 


এব্যাপারে শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক দীপঙ্কর বাছাড় দিপু জানান, আম্ফানে আমার ইউনিয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। পুরানো-নতুন দিয়ে প্রায় ৬০ কি.মি. ইটের সোলিং সংস্কার ও নির্মান করা হলে ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার লোকজন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ভালোভাবে যাতয়াত করতে পারবে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি স্যারের বিশেষ বরাদ্দে মাটির কাজ ও সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। 


তবে আম্ফান উপদ্রুত এলাকা হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় প্রত্যেকটি রাস্তা সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মান করতে হলে বড় ধরণের বরাদ্দ প্রয়োজন। কারণ ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে এতবড় কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, কাঁকড়াবুনিয়া গ্রামের ৪ কি.মি., মহিষকুড় গ্রামে ৩ কি.মি., নাসিমাবাদ গ্রাম থেকে কলিমাখালি স্লুইসগেট ও খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫ কি.মি.ইটের সোলিং রাস্তা সংস্কার করা অতি জরুরী। বর্ষার পানি জমা শুরু হলে এসব এলাকায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠবে।


 টিআর, কাবিখা সহ এমপি স্যারের বিশেষ বরাদ্দের টাকায় প্রায় ৫ কি.মি. ইটের সোলিং ও  ১১ কি.মি. মাটির রাস্তার সংস্কার করা হয়েছে। মাটির কাজ করা হয়েছে মাড়িয়ালা গ্রামে দেড় কি.মি., লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামে আধা কি.মি. পুইজালা বৌদির খেয়াঘাট সংলগ্ন প্রায় ১ কি.মি. ও ঢালীরচক গ্রামে প্রায় ২ কি.মি. ইটের সোলিং রাস্তা কয়েকটি প্রকল্পের টাকা দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। 


পুইজালা গ্রামের পুইজালা গ্রামে কি.মি., বয়ারশিং গ্রামে ৩ কি.মি., নাসিমাবাদ গ্রামে আড়াই কি.মি. ও কলিমাখালী গ্রামে দেড় কি.মি. রাস্তায় মাটির কাজ ইতিমধ্যে করা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া পুইজালা বৌদির খেয়াঘাট থেকে পিচের রাস্তা পর্যন্ত ও পুইজালা নগেন্দ্র মাষ্টারের বাড়ি থেকে ওয়াপদাগামী রাস্তায় এডিবি’র বরাদ্দে ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইটের সোলিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। 

চেয়ারম্যান দীপু বলেন, বিলবকচর কালীমন্দির থেকে পুইজালা স্লুইসগেট পর্যন্ত প্রায় ২ কি.মি., পুইজালা বাবু চৌকিদারের বাড়ি থেকে স্লুইসগেট পর্যন্ত আধা কি.মি., একই গ্রামের আনিছুর হালদারের ঘেরে থেকে শৈলেন ম-লের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় আড়াই কি.মি., শহর গাজীর বাড়ী থেকে লক্ষ্মীখালি বাঁধ পর্যন্ত প্রায় ২ কি.মি., মহিষকুড় মান্নানের মোড় থেকে সারদার বাঁধ পর্যন্ত ২ কি.মি., বকচর সানা বাড়ি থেকে মাড়িয়ালা হাইস্কুলগামী প্রায় ১ কি.মি., 


লাঙ্গলদাড়িয়া থেকে নাসিমাবাদ খালের মাথা পর্যন্ত প্রায় ৩ কি.মি., বিল থানাঘাটা গ্রামে দেড় কি,মি., বিল বুড়াখারআটি গ্রামে প্রায় দেড়  কি.মি., ঢালিরচক গ্রামে ১ কি.মি., মহিষকুড় গ্রামে দেড় কি.মি., লাঙ্গলদাড়িয়া ইজ্জত আলীর বাড়ি থেকে শহীদ মোল্যার বাড়ি পর্যন্ন ১ কি.মি.,কলিমাখালী গ্রামে ৪ কি.মি., নাসিমাবাদ গ্রামে ২ কি.মি., মাড়িয়ালা গ্রামে আরও দুই রাস্তা মিলে ৪ কি.মি., হাজরাখালী গ্রামে আধা কি.মি. ও গাজীপুর গ্রামে প্রায় ৩ কি.মি. সর্বমোট প্রায় ৩১ কি.মি. মাটির রাস্তায় সংস্কার কাজ করা আশু প্রয়োজন। 


চেয়ারম্যান দিপংকর বাছাড় আরও বলেন, আমাদের কোলা-ঘোলা টু আশাশুনি প্রধান সড়কের মধ্যে প্রায় ৩ কি.মি. (পুরানো কার্পেটিং), মাড়িয়ালা বাজার ছাড়িয়ে কোলা-ঘোলা বাসস্ট্যা- পর্যন্ত, মহিষকুড় মৎস্যসেট সংলগ্ন ও বালিরমাঠ সংলগ্ন এলাকায় সেভাবেই পড়ে আছে। প্রধান সড়কের অবশিষ্ট কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে এ নিয়ে সাধারণ মানুষ নানা প্রশ্ন তুলছেন। অবিলম্বে প্রধান সড়কের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে তিনি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাগনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 


আম্ফান উপদ্রুত শ্রীউলা ইউনিয়নের ২২ গ্রামের সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদীর বেড়িবাঁধ টেঁকসইভাবে নির্মানসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে অবহেলিত গনমানুষের পক্ষে প্রয়োজনীয় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, জেলা প্রশাসক হুমায়ন কবির, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ানুর রহমানের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।