কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে দুধকুমর নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। দুধকুমর নদের ওপর অবস্থিত শতবর্ষী সোনাহাট রেল সেতুর ৪০ থেকে ৫০ মিটার উত্তরে দুধকুমার নদের একাধিক স্পট থেকে দিন-রাত বালু তুলে বিক্রি করছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ী চক্র। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সোনাহাট রেল সেতুটি।
বালু উত্তোলনের কারণে একদিকে যেমন সেতুটি রয়েছে হুমকিতে অন্যদিকে সোনাহাট স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা রয়েছে দুচিন্তায়।
কারণ যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে বন্ধ হতে পারে স্থলবন্দরের পরিবহন কার্যক্রম। এ ছাড়া বালু উত্তোলনের স্থান থেকে মাত্র কয়েক মিটারের মধ্যে রয়েছে বসতি, স্থাপনা আর ফসলি জমি। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি ধসে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছে অধিবাসীরা।
স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করলে গত ৪ ফেরুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা পাইকেরছড়া ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিলেও বালু ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের নির্দেশকে উপেক্ষা করে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন শতাধিক ট্রলি, থ্রি হুইলার, ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ আয়োজন। গাড়িপ্রতি ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে বালু ব্যবসায়ী চক্র।
গাড়ির হিসাব রাখার জন্য তাঁবু খাটিয়ে বসে আছে আকরাম হোসেন (১০) নামের এক শিশু। তার দৈনিক মজুরি ২০০ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মী নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী চক্র। আর এ চক্রের মাধ্যমেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে পাইকেরছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'কে বা কারা বালু তুলে বিক্রি করছে তা আমি জানি না। '
নদীভাঙনের শিকার ও বালু উত্তোলনকৃত জমির মালিক আলমগীর, শফিয়ার রহমান, আলাউদ্দিন ও ছালেহা বেগম অভিযোগ করে বলেন, কয়েক বছর পূর্বে দুধকুমর নদীভাঙনে তাঁরা বসতবাড়ি হারিয়েছেন। বালু ব্যবসায়ীরা ক্ষমতার দাপটে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। বাধা দিলেও তাঁরা মানছেন না। এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু করতেও পারছি না। বালু উত্তোলন বন্ধ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তাঁরা।
ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, 'ইউএনও স্যারসহ আমি কয়েক দিন আগে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু তারা আবার বালু তুলছে বলে শুনেছি। ' উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।