সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের মাথাইলচাপড় গ্রামের মৃত আবুল হোসেন মন্ডলের কন্যা মেরিনা খাতুন। পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে নারী নির্বাচন করে পরাজিত হন। এরপর ভোট না দেবার অভিযোগে তিনি বন্ধ করেছেন গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে ঢোকার একমাত্র রাস্তা।
গত একমাস ধরে ওই এলাকার রোগীরা ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে যেতে পারছেন না। এতে করে ওই ব্লকের অন্তত চারশ রোগী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এদিকে, যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ থাকায় ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যা কমেছে ষাট শতাংশেরও বেশি।
আজ মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে হেরে যাবার দু'দিন পরই ওই প্রার্থী গ্রামের পশ্চিম পাশের কবরস্থানের পূর্বপাশ দিয়ে মাথাইলচাপড় কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রবেশের একমাত্র পথটি ইটের দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেন। দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবেশের একটি সরু গলি ছিল। সেটিও টিনের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে করে ওই ক্লিনিকে ঢোকার সবগুলো পথই বন্ধ হয়ে যায়। ক্লিনিকে কর্মরতরা অনেক দূর ঘুরে ধানক্ষেতের কাদা মাড়িয়ে অফিস করছেন। কিন্তু তারা যেতে পারলেও চিকিৎসা সেবা গ্রহিতরা যেতে পারছেন না। অনেকেই ক্লিনিকে ঢুকতে না পেরে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। এতে করে অশেষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ।
স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা ইছমাতন নামের একজন জানান, নির্বাচনে জিতপার পারে নাই দেইহা ঘাটা (পথ) বন্ধ কইরা দিছে মেরিনা। এহন আমরা কন (কোন দিক) দিয়া যামু। শ্বাসকষ্টের রুগী আমি। চরার (খেত) মধ্যে দিয়া ক্যাদোকুদু (কাদা) পাইরা আছি।
হাসান নামের কাটা ঘায়ের রোগী জানান, আগে কবরস্থানের পূর্বপাশ দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা ছিল। ওখান দিয়ে ভালোভাবে আসা যাওয়া করা যেত। রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়াতে খুবই সমস্যা হয়েছে। সঠিক সময়ে ডাক্তার দেখাতে পারছেন না তিনি।
টুবুলি খাতুন নামের আরেকজন সেবাগ্রহীতা বলেন, আইসা দেহি কিলিনিকে (ক্লিনিক) যাওয়ার সড়কে দেওয়াল তুলছে। একজন কইলো যে গোরস্থানের মধ্য দিয়া যাওয়া যায়। পরে গোরস্থানের মধ্য দিয়াই খুব ভয়ে ভয়ে গেছি। যায়া দেহি দহিণ (দক্ষিণ) পাশের গেটে তালা দেওয়া৷ পরে ফিরা আইসা ধানের ভূইয়ের (খেত) মধ্যে দিয়া কিলিনিকে (ক্লিনিক) যায়া ডাক্তার দেহাছি।
ওই ক্লিনিকের সিএইচসিপি মাহমুদা খাতুন জানান, ওই রাস্তা বন্ধ করাতে রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। আমি নিজেও জমির আইল দিয়ে ক্লিনিকে আসি। দ্রুত সড়কের মুখ খুলে দিয়ে রোগীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিলে আমরা আগের মতো সেবা দিতে পারবো।
এ বিষয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রবেশ পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী পরাজিত নারী ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) সদস্য প্রার্থী মেরিনা খাতুনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার চাচিশাশুড়ি বলেন, গ্রামের সব মুরুব্বিরা মেরিনাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু কেউ ভোট দেয়নি। তাই রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। রাস্তা আর কখনই দেবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোমেনা পারভীন পারুল জানান, ক্লিনিকটা একেবারে অবরুদ্ধ করে রেখেছে পরাজিত ওই নারী ইউপি সদস্য প্রার্থী। এতে গ্রামের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হচ্ছে। ওই ব্যক্তির (মেরিনা খাতুনের) সাথে কথা বলতে গেলে আমার সাথে খারাপ আচরণ করেন। পরে আমি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি।
চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান মুকুল জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। যতো দ্রুত সম্ভব দেয়ালটি সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।