বরিশালে তিন বছরেও শেষ হয়নি স্কুল ভবনের এক-তৃতীয়াংশ কাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:২৫ অপরাহ্ন
বরিশালে তিন বছরেও শেষ হয়নি স্কুল ভবনের এক-তৃতীয়াংশ কাজ

মহামারী করোনা সংক্রমণের কারণে টানা দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকার পর গত রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। স্কুল খোলার খবরে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত স্কুলশিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তবে বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কড়াপুরের ৩নং ওয়ার্ডের ১৫৭নং দক্ষিণ কড়াপুর মসজিদ বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭৫জন শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস ও আনন্দের বদলে নিরানন্দ এবং নিরাশা ভর করেছে। এদিকে সচেতন মহল মনে করছে, দীর্ঘদিন পর স্কুল খুললেও শিক্ষার্থীরা নতুন ভবন না পাওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৫৭নং দক্ষিণ কড়াপুর মসজিদ বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির জরাজীর্ণ পুরাতন ভবন ২০১৪ সালে ভেঙে ফেলা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকারের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এলজিইডির তত্বাবধায়নে ৮৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৫ টাকা ব্যয়ে স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ছোহরাব উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত স্কুল ভবনের কাজ বন্ধ থাকায় ভবন নির্মাণের সামগ্রী এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। স্কুলে আসা ছোট ছোট বাচ্চাদের যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 


বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান তালুকদার জানান, বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবন ভেঙে ফেলার পর নতুন ভবন নির্মাণ চলাকালীন সময়ে মাঝে মধ্যেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকার মাসুম খান স্কুলের কাজ বন্ধ রেখে অন্যত্র কাজ পরিচালনা করতো। তিন বছর অতিবাহিত  হলেও তাদের কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি। তিনি আরও বলেন, অনেকদিন কাজ বন্ধ থাকায় ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ২/৩ জন লেবার পাঠিয়ে তাদের মাধ্যমে ১/২ দিন কাজ করে পুনরায় তারা লাপাত্তা হয়ে যায়। এভাবেই তিন বছর হয়ে গেছে কিন্তু বিদ্যালয়ের কাজের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কাজ শেষ করেই ফেলে রাখা হয়েছে। 


অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পটির দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত বরিশাল সদর উপজেলার প্রকৌশলী সৈয়দ মাইনুল মাহমুদ এর কারণেই কাজটি বন্ধ রাখার সুযোগ নিয়েছেন ঠিকাদার মাসুম খান। তারা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কাজের অগ্রগতি দেখিয়ে কাগজপত্র ঠিক রাখছেন। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা বরং ঠিকাদারের পক্ষে প্রকল্পটির ‘টাইম এক্সটেনশন’ করার জন্যও তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। 


এ ব্যাপারে ঠিকাদার মাসুম খানের সাথে কথা বলতে তার ব্যবহত (০১৭২....৫৮০৯) নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। 


বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমা আক্তার জানান, স্কুল ভবন নির্মাণ কাজ চলাকালীন রাজমিস্ত্রীদের থাকা ও নির্মাণ সামগ্রী রাখার জন্য টিন দিয়ে অস্থায়ী একটি স্থাপনা নির্মাণ করেছিলো ঠিকাদার মাসুম খান। আর সেই অস্থায়ী জরাজীর্ণ টিনসেড কক্ষেই চলছে পাঠদান। যেখানে বৃষ্টি হলেই বেয়ে পড়ে পানি। কর্দমাক্ত হয় কক্ষ। পাশাপাশি তীব্র গরমের মধ্যেই ছোট ছোট কমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে নতুন ভবন নির্মাণে আরো দেরী হলে অনেক শিক্ষার্থী-ই হয়তো ঝরে পড়বে বলে মনে করেন তিনি। একই কথা জানান, স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক।


এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দিলদার নাহার এর সাথে কথা বলতে চাইলেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি। 


উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ মাইনুল মাহমুদ বলেন, প্রকল্পটির ‘টাইম এক্সটেনশন’ করা হয়েছে। এছাড়াও ওখানের পুরাতন ভবনটি অকশন করার জন্য ৭/৮ মাস দেরি হয়েছে। কাগজে কলমে দেখানো হয়েছে ২০১৯ সালে টেন্ডার হয়েছে কিন্তু পুরাতন ভবনটি নিলাম করতে গিয়ে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। এমনকি অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে প্রায় এক লাখ টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারপরও স্কুলের কাজ খুব দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি। 


বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুনিবুর রহমান এর কাছে সকল বিষয়ে অবগত করলে তিনি জানান, সদর উপজেলার স্কুলের যেকোনো বিষয়ে আমার কোন কার্যক্রম বা হস্তক্ষেপ করার উপায় নেই এ বিষয়টি সম্পূর্ণ উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই দেখেন। তবুও আমি এই স্কুল সংশ্লিষ্ট যেসকল কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের সাথে কথা বলে খুব দ্রুত বিষয়টি সমাধানের চেস্টা করবো।