ঝিনাইদহ পৌর এলাকার নতুন কোর্টপাড়ার মাঠে ধান চাষ তদারকী করেন কৃষক মহিউদ্দীন। দুই মাস আগেও তার সেচ পাম্পে পর্যাপ্ত পানি উঠতো। দিন যতই যাচ্ছে পাম্পে পানির পরিমান কম উঠছে। দিনের বেলায় কম ও রাত ১১টার পর পানি বেশি উঠছে বলে তিনি জানান। ভারি বৃষ্টি না হলে কৃষক মহিউদ্দীনের মতো ঝিনাইদহের হাজারো কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ফারাক্কা ও অনাবৃষ্টির প্রভাবে ঝিনাইদহে প্রায় ৫০ হাজার টিউবওয়েলে কম পানি উঠছে। ইতিমধ্যে পানির স্তর ২০ থেকে ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কৃষকের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্টদের দাবি, ইরি ধানের মাঠে সেচকাজে মাত্রাতিরিক্ত ভুগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় এমনটি হয়েছে।
চলতি শুষ্ক মৌসুমে জেলার বেশিরভাগ বিল-ঝিল, জলাশয় ও পুকুর-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। বিশেষ করে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ১০ নদী ও ২টি নদের প্রায় ৮০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে। এসব নদীর তলদেশে কৃষকরা এখন ধানচাষ করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ছয় উপজেলায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধীক নলকূপে পানি কম উঠছে।
শ্রমিকরা বলছেন, সাধারণত ২০ থেকে ৩০ ফুট মাটির নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচেও পানির লেয়ার মিলছে না। জেলা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বলছে, তাদের অনুমতি নিয়ে জেলায় ১৭০টির মতো গভীর এবং ৭ হাজার ৯২১টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। তবে তাদের অনুমতি ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েক হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে।
এসব নলকূপ থেকে নিয়ম না মেনে যত্রতত্র পানি উত্তোলন করায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে বাসা বাড়ির অগভীর নলকূপে। জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএডিসি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ৮ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎসগুলো ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার মধ্যে শৈলকুপাতেই রয়েছে ৩৭ হাজার ৫০০ নলকূপ। যার ভেতরে এই মুহূর্তে বেশিরভাগ নলকূপে পানি কম উঠছে। এরমধ্যে অনেক টিউবওয়েল পানি না ওঠায় অকেজো হয়ে পড়েছে। অথচ উপজেলায় সরকারি নলকূপ রয়েছে মাত্র ১৫০০টি। টিউবয়েল ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, তাদের শ্রমিকরা গ্রামাঞ্চলে নলকূপ বসিয়ে থাকে।
সাধারণত ২০ থেকে ২৪ ফুট মাটির নিচে পানির লেয়ার বা স্তর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩২ থেকে ৪০ ফুট নিচে পানির লেয়ার মিলছে। তবুও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। জেলার পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু জানান, দেশের মধ্যে চরম ক্ষরাপ্রবণ এলাকা এই ঝিনাইদহসহ আশপাশের অঞ্চল।
গবেষণা বলছে মরু এলাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এটি। তাছাড়া দেশের অন্য এলাকা থেকে জলাশয়ও কম। এক কিলোমিটারের মধ্যে গভীর নলকূপ না বসানোর নিয়ম থাকলেও কেউ মানছে না। পানি প্রবাহের উৎস নদ-নদী ভরাট করে দখল হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে নদী খনন করতে হবে। নিয়ম মেনে গভীর নলকূপ স্থাপনে নজরদারি করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, জেলাজুড়ে কত হাজার বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে তা আমাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে জেলায় ১৬ হাজার গভীর ও ১৭ হাজার অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। তিনি জানান, বিভিন্ন ফোরামে বা সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলে তারা জানিয়েছেন যেন ডিজাইন মাফিক নলকূপ স্থাপনের আইন পাস হয়।
প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে। ঝিনাইদহ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সহকারী প্রকোশলী (ক্ষুদ্র সেচ) সামিউল পারভেজ জানান, সময়টা এখন শুষ্ক এবং উষ্ণকাল। এ সময় নদ-নদীর পানি কমে আসে। যে কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নেমে যায়। তাই এ সময় পানি ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়ম মেনে পাম্প স্থাপন করলে সমস্যা কিছুটা কমবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।