দক্ষিণাঞ্চলে ড্রেজিং কার্যক্রমে নেই সমন্বিত উদ্যোগ !

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৭শে জানুয়ারী ২০২২ ০৬:৩০ অপরাহ্ন
দক্ষিণাঞ্চলে ড্রেজিং কার্যক্রমে নেই সমন্বিত উদ্যোগ !

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌরুটে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৮৮টি নৌরুটের প্রায় ২৭টি রুট-ই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একদিকে নাব্যতা সংকট অপরদিকে শীতকালীন আবহাওয়ায় রাতে চলাচলকারী লঞ্চগুলো ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হচ্ছে। বিভিন্ন নদীতে ড্রেজিং করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবী করছেন এ অঞ্চলে চলাচলকারী লঞ্চদের মাস্টাররা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সমন্বিত ড্রেজিং কার্যক্রম এবং নদীর মানচিত্রের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ও জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলনের বরিশালের নেতৃবৃন্দ।


সূত্রমতে, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ৮৮টি নৌ-রুটের মধ্যে শুকনো মৌসুমে ২৭টি রুট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বাকি ৫৭টি রুটেও ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ নৌপথ সচল রাখতে ড্রেজিংই একমাত্র উপায়। প্রথম শ্রেণির নৌপথের জন্য কমপক্ষে ৯ থেকে ১২ ফুট এবং ২য় শ্রেণির নৌপথের জন্য ৭ থেকে ৯ ফুট পানি প্রয়োজন। কিন্তু নাব্যতা সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি রুটে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এসব রুটে চলাচলরত লঞ্চগুলোর মাস্টারদের অভিযোগ, ড্রেজিং চলমান থাকলেও তা সঠিক স্থানে হচ্ছে না। এতে করে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।


তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শুকনো মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই মেহেন্দিগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী লাহারহাট রুটে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হতে থাকে। সেখানে দুই-তিনটি ড্রেজার চালু থাকলেও দীর্ঘদিনেও নাব্যতা সংকট কাটেনি। বর্তমানে পাতারহাট স্টিমারঘাটে লঞ্চ ভিড়তে পারছে না। নৌ-বন্দর থেকে প্রায় ৩০ মিনিটের দূরত্বের সিমনির চরে ট্রলার, নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাসকাটা নদীতে দুটি ড্রেজার দিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ প্রভাবশালীদের সুবিধা অনুযায়ী ড্রেজিং করছে। 


পার্শ্ববর্তী হিজলা উপজেলাগামী লঞ্চগুলোও নাব্যতা সংকটে কখনোই যথাসময়ে সেখানে পৌঁছাতে পারছে না। এরুটে চলাচলকারী লঞ্চের মাস্টাররা জানান, হিজলার কালীগঞ্জ পৌঁছাতে বিভিন্ন স্থানে নাব্যতা সংকট থাকায় সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি ঝুঁকিও বেড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোর পাশাপাশি ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটের বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর জেগে ওঠায় লঞ্চ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।


ড্রেজিং না হওয়ায় ঘন কুয়াশায় সরু চ্যানেল দিয়ে যাতায়াতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীতে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং কার্যক্রম চালু থাকলেও সমন্বয়ের অভাবে তা কোনো কাজে আসছে না।


একাধিক লঞ্চের মাস্টাররা জানান, মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া, মল্লিকপুর ও কালীগঞ্জ, বামনার চর থেকে লাল খয়রাবাদ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার, চাঁদপুরের মাঝের চর চ্যানেলসহ এসব এলাকার পার্শ্ববর্তী স্থানে অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে। মেঘনার চাঁদপুরের হাইমচর থানার মাঝ বরাবর নতুন করে দুটি ডুবোচর জেগে উঠেছে। সেখানে আগে সাত থেকে আট মিটার পানি ছিল। বর্তমানে ডুবোচরের কারণে চ্যানেলটি ছোট হয়ে গেছে। বর্তমানে এ স্থান থেকে ডানদিকে সরে লঞ্চ চালালে উলটো দিক থেকে আসা লঞ্চগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষের আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে। ডুবোচর দুটি হাইমচর ও হরিণা ফেরিঘাটের নিচে অবস্থিত। সেখানে এক স্থানে বয়া দেওয়া আছে আর অন্য জায়গায় বয়া নেই। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। ভাটার সময় পানি কমে গেলে লঞ্চ চলাচল আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, ফলে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।


লঞ্চ ব্যবসায়ীরা জানান, নাব্যতা সংকটের কারণে দিনে দিনে বরিশালে বিভিন্ন রুট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি রুটে লঞ্চ পৌঁছাতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা দেরি হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময়ে লঞ্চ চলাচল আরো কমে আসবে। তাছাড়া পদ্মাসেতু উন্মুক্ত হলে নৌপথে যাত্রী আকর্ষনে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্রে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌছাতে হলে সারাবছরই নদীপথ সচল থাকতে হবে বলে মনে করেন তারা।


বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া জানান, বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল নদীবন্দর, বাকেরগঞ্জের কারখানা নদী, কবাই, গারুরিয়া, ডামুডিয়া, লাহারহাট, ভেদুরিয়া, মেহেন্দিগঞ্জসহ বিভিন্ন নদীতে মোট ১৫টি ড্রেজার দিয়ে কার্যক্রম চলছে। যা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস), লঞ্চের মালিক, মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে অব্যাহত রয়েছে।


বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলন বরিশাল বিভাগীয় আহ্বায়ক মো. রফিকুল আলম বলেন, ড্রেজিং কার্যক্রমে সমন্বিত উদ্যোগ নেই। নদীগুলোকে রক্ষা করতে হলে প্রথমে হাইড্রোলজিক্যাল সমীক্ষা চালিয়ে নদীর মানচিত্র তৈরির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।