শ্রীলঙ্কায় ২১ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সিরিজ হামলার পর নড়েচড়ে বসেছে সে দেশের নিরাপত্তাবাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্রহণ করছে নানা পদক্ষেপ। এরই অংশ হিসেবে শনিবার বড় আকারের ছুরি-তরবারিসহ অন্যান্য সাধারণ অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে লঙ্কান প্রশাসন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। তবে, দৈনন্দিনকাজে ব্যবহৃত ছুরি-তরবারি এর আওতাভুক্ত নয় বলে উল্লেখ্য করা হয়। লঙ্কান পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা বলেন, এগুলোর বাইরে কারও কাছে পুলিশ বা সামরিক বাহিনীর ইউনিফর্ম থাকলে সেটিও নিকটস্থ থানায় জমা দিতে হবে। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এ জরুরি নির্দেশনা আজ রোববার পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
সিরিজ বিস্ফোরণের পর থেকে গোটা দেশজুড়ে কয়েক দফায় তল্লাশি, অভিযান চালিয়েছে দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী। অভিযানে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। তবে পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী, কেউ রোববারের মধ্যে এসব অস্ত্র বা পোশাক থানায় জমা দিলে তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে কি-না; সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এদিকে এ হামলা নিয়ে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহেশ সেনানায়েকে বলেন, সম্ভবত সন্ত্রাসী কর্মকা-ের প্রশিক্ষণ নিতে হামলাকারীরা ভারতের কাশ্মির, কেরালা ও বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিল। তবে তাদের সেখানে যাওয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই। হামলার ব্যাপারে ভারতের গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরও কেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, নতুন করে কিছু বলার নেই। শ্রীলঙ্কা সরকারের মধ্যে বোঝাপড়ায় হয়তো একটা ফাঁক থাকতে পারে, যা এখন সবারই জানা।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় সবাই স্বাধীন। গত ১০ বছরে সেখানে বড় ধরনের কোনও হিংসা বা হানাহানির ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ দেশ হওয়ায় নিরাপত্তা নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব একটা চিন্তা ছিল না। উল্লেখ্য, গত ২১ এপ্রিল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো ও তার আশপাশের তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলসহ আটটি স্থানে বিস্ফোরক দিয়ে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় নিহত হন ২৫৩ জন। ভারত ও শ্রীলঙ্কার সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার মাত্র দুই ঘণ্টা আগেই লঙ্কান কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এর আগে গত ৪ এপ্রিল ও ২০ এপ্রিল রাতেও দু’দফায় লঙ্কান গোয়েন্দাদের এ বিষয়ে সতর্ক করে দিল্লি।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি’র তথ্যানুযায়ী, গির্জায় হামলার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার পুলিশকে আগেই সতর্ক করেছিল একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা। ১১ এপ্রিল পুলিশ প্রধান পুজুথ জয়াসুনদারা দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে এ সংক্রান্ত গোয়েন্দা সতর্কতা পাঠান। এতে বলা হয়, একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত (এনটিজে) প্রখ্যাত চার্চ এবং কলম্বোয় ভারতীয় হাইকমিশন লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। এমন তথ্য থাকার পরও হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনারমুখে পড়েন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তিনি বলেন, পুলিশের কাছে আগাম গোয়েন্দা তথ্য থাকলেও এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টকে জানানো হয়নি। পরে, হামলার গোয়েন্দা তথ্য গোপন করায় প্রতিরক্ষা সচিব হেমাসিরি ফার্নান্দো এবং পুলিশ প্রধান পুজিথ জয়াসুন্দরাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন সিরিসেনা।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।