প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ১২:১৫
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
সম্প্রতি ভারত সরকার কর্তৃক বাংলাদেশে জাতিগত বাঙালি মুসলিমদের পুশইন বন্ধে কঠোর ভাষায় আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি বলেছে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে যেভাবে শত শত মুসলিমকে সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। সংস্থাটি আরও বলেছে, প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আইনগত সুরক্ষার নিশ্চয়তা পাওয়া এবং নির্বিচারে আটক বা বহিষ্কার থেকে রক্ষা পাওয়া।
গত এপ্রিলে কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলার পর থেকেই বিজেপি সরকারের মধ্যে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বিতাড়নের প্রবণতা বেড়েছে। ওই হামলার পর থেকেই বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়, যার লক্ষ্য করা হয় তথাকথিত অবৈধ অভিবাসীদের। ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই অভিযানের অংশ হিসেবে বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করে, যাদের অধিকাংশই মুসলিম এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত শত শত বাঙালি মুসলিমকে কোনো যাচাই-বাছাই বা কোর্টের আদেশ ছাড়াই বাংলাদেশে পুশইন করেছে। অথচ এসব মানুষের অনেকেই সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর ভারতীয় নাগরিক। শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে তাদের বৈধতা যাচাই না করে বহিষ্কার করা হচ্ছে, যা ভারতের অভ্যন্তরীণ জাতিগত বৈষম্যেরই এক রূপ।
বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতকে একাধিকবার আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কোনো রকম পরামর্শ বা প্রমাণ ছাড়া সীমান্তে পুশইন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিপন্থী। যদিও নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে এসব চিঠির কোনো জবাব আসেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপি সরকারের হিন্দু জাতীয়তাবাদী অবস্থান ইতিমধ্যেই ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন থেকে শুরু করে নানা নীতিমালার মধ্য দিয়ে ভারতীয় মুসলমানদের পেছনে ফেলার একটি পরিকল্পিত কাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। বাঙালি মুসলমানদের এভাবে লক্ষ্যবস্তু করাও তারই অংশ।
ভারত সরকার অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা কেবল অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা বলছে, সরকারের পদক্ষেপগুলো নির্বাচনপূর্ব রাজনীতির অংশ এবং মুসলমানদের আতঙ্কিত করার হাতিয়ার।
এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি না হলে এই অন্যায় চলতেই থাকবে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। মানবাধিকারের ন্যূনতম মানদণ্ড রক্ষা করতে হলে ভারতের উচিত হবে দ্রুত পুশইন বন্ধ করা এবং প্রত্যেককে আইনানুগ সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ঘটনাগুলো দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও জাতিগত সহাবস্থানের বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল।