প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ১১:২০
মধ্যপ্রাচ্যে আবারও নতুন করে উত্তেজনার আগুন জ্বলেছে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে। শুক্রবার রাতে ইরান শুরু করে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামের একটি প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযান, যার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ শহর তেল আবিব, জেরুজালেমসহ বিভিন্ন স্থাপনা। মিসাইল হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। ইরানের এই হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানায়, এই হামলায় মধ্য ইসরায়েলের একাধিক স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে দুইজন নিহত হন এবং আহত হন কমপক্ষে ২০ জন। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা হয় এবং আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ইসরায়েলের শেবা মেডিকেল সেন্টার জানিয়েছে, তাদের হাসপাতালে ৪৩ জন আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং ২৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হামলার তীব্রতা এতটাই ছিল যে ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক মানুষ আটকা পড়েন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন। উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছেন ডজনখানেক উদ্ধারকর্মী ও সামরিক সদস্য।
এই হামলার পেছনে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি সরাসরি প্রতিশোধ, কারণ এর দুইদিন আগেই ইসরায়েল হঠাৎ রাতের আঁধারে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের একটি সামরিক অভিযানে ইরানের রাজধানী তেহরান ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালায়।
ইসরায়েলের ঐ হামলায় নিহত হন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদরদপ্তরের প্রধান মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদসহ অন্তত ৭৮ জন, যাদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন পরমাণু বিজ্ঞানী। এই ঘটনায় পুরো ইরানজুড়ে শোক ও প্রতিশোধের হুমকি দেখা দেয়।
এই ঘটনার পর ইরানের সামরিক নেতৃত্ব সরাসরি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। রাতভর চলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আকাশে সাইরেন বাজতে থাকে, জনগণ নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করে। রাজধানী জেরুজালেম ও তেল আবিবজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এরপরই জানা যায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে মাটির নিচে নির্মিত একটি বাংকারে আশ্রয় নেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও সর্বোচ্চ সতর্কতায় চলে যায় এবং পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিতে থাকে।
এই ক্রমাগত প্রতিশোধ আর পাল্টা প্রতিশোধের রাজনীতিতে গোটা মধ্যপ্রাচ্য এক অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রবেশ করেছে। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।