ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলা যেন থামছেই না। প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে নিহত ও আহতের সংখ্যা। একের পর এক বিমান হামলায় বিধ্বস্ত হচ্ছে গাজার ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল এমনকি রাস্তাঘাটও। সর্বশেষ ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪০ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের এই সংখ্যা ছাড়াও নতুন করে আহত হয়েছেন আরও ১৪৬ জন। এতে করে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার ৯০০ জনে।
আনাদোলু বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় ফের নতুন করে হামলা শুরু করে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন হাজার ৮০০ জনেরও বেশি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে আরও জানা যায়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৮৭৫ জনে। হতাহতদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্কের সংখ্যাই বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধার কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে অব্যাহত বোমা বর্ষণে।
এদিকে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বন্ধে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক চাপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই সিদ্ধান্ত হলেও তা বেশিদিন টেকেনি। গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মতানৈক্যের জেরে ফের হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইসরায়েলের হামলায় গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া গাজার অবকাঠামোর ৬০ শতাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি, চিকিৎসা, খাদ্যসহ সব ধরনের সংকটে আছে সাধারণ মানুষ।
এর আগেও ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। একই সঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলাও চলছে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ, আন্তর্জাতিক আদালতের পদক্ষেপ, যুদ্ধবিরতির চুক্তি—সবই যেন ব্যর্থ গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামাতে। দিন দিন আরও নৃশংস হয়ে উঠছে এই আগ্রাসন। অথচ মানবিক বিপর্যয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো গাজা উপত্যকা।