বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর নেতৃত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও জাতীয় পরিচয়ের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে, যা আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্মরণীয়। তাঁর জীবনের একেকটি অধ্যায় দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হয়।
১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার বাগবাড়ী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান। তিনি ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং পর্যায়ক্রমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিযুক্ত হন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে তাঁর সাহসিকতা তাকে বীরত্বসূচক পুরস্কার এনে দেয়। তবে, তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসীম সাহসিকতা ও নেতৃত্বে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়। জিয়াউর রহমান ‘জেড ফোর্স’ গঠন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম প্রধান সেনাপতি হিসেবে কাজ করেন। তিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা পুরো জাতিকে একত্রিত করে। তাঁর এই ঘোষণা কেবল একটি দেশের স্বাধীনতার ঘোষণাই ছিল না, বরং এটি বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাংলাদেশি পরিচয়ের প্রতিষ্ঠাও ছিল।
স্বাধীনতার পর, ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রীয় সংকটের সময়, জিয়াউর রহমান আবারও দেশের নেতৃত্বে আসেন। ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এই সময়েই ৭ নভেম্বর সিপাহি বিপ্লব ঘটে এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে জিয়া বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে পুনরায় স্থিতিশীলতা আনার জন্য কাজ শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।
জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, এবং সামাজিক ন্যায় বিচার। তিনি জানতেন যে, একটি জাতির প্রকৃত শক্তি তার ঐক্যে নিহিত। তিনি একটি জাতিগত এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য কাজ করেন যেখানে সকল ধর্ম, ভাষা, জাতি ও সংস্কৃতি সমান মর্যাদায় থাকবে। তাঁর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তিনি কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
১৯৮১ সালে শহীদ জিয়াউর রহমানকে হত্যার পরও তাঁর আদর্শ আমাদের জীবনে চিরকালীন প্রভাব রেখে যায়। তাঁর আদর্শ এবং জাতির প্রতি তাঁর অবদান আজও আমাদের মাঝে জীবিত। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন, তার অসম সাহসিকতা, এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার আজও আমাদের পথপ্রদর্শক। তাঁর চিন্তা-ভাবনা, যা সবার জন্য সমান অধিকার, সামাজিক ন্যায় বিচার এবং মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যাহা আজও আমাদের মাঝে জীবন্ত। তাঁর আদর্শ, নেতৃত্বের ভাবনা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি আজও বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক শক্তিশালী প্রেরণার উৎস। তাঁর অবদান একদিকে যেমন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা প্রদান করেছে, তেমনি জাতির ঐক্য এবং দেশের উন্নয়নে তাঁর ভাবনা আজও আমাদের পথপ্রদর্শক। যাতে আমরা একটি উন্নত, ঐক্যবদ্ধ এবং সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সেই লক্ষ্যে কাজ করে গিয়েছেন।
লেখক: পলাশ সাহা, এডভোকেট, জজ কোর্ট, ঢাকা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।