জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, জুলাই মাসের অভ্যুত্থানকালে বাংলাদেশে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক যৌন সহিংসতা ও লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশেষত মহিলা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে শারীরিক সহিংসতার পাশাপাশি লিঙ্গভিত্তিক অপমান এবং যৌন নির্যাতন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়ের তথ্য-অনুসন্ধান ইউনিট জানায়, ‘মহিলা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শারীরিক আক্রমণ মূলত মুখ, বুক, শ্রোণী ও নিতম্বে করা হয়েছে।’ এমন আক্রমণগুলি কেবল শারীরিক ব্যথা দিতে নয়, নারীদের লিঙ্গভিত্তিক অপমান এবং অবমাননার উদ্দেশ্যে ছিল।
ওএইচসিএইচআর আরও জানায়, আন্দোলনকারীদের মধ্যে নারীদের উপস্থিতি কমিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা চালানো হয়েছে। প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে শারীরিক সহিংসতার পাশাপাশি তাদেরকে ‘বেশ্যা’, ‘মাগী’, ‘পতিতা’ এবং অন্যান্য অপমানজনক শব্দ দিয়ে ডাকা হতো।
এছাড়া, আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের পুরুষ সদস্যরা যৌন সহিংসতার জন্য মহিলাদের মৌখিক হুমকি দিয়ে আসছিলেন। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমন সহিংসতার শিকার হওয়া মহিলাদের নির্যাতনের নানা বর্ণনা পাওয়া গেছে।
একটি ঘটনায়, ঢাকায় এক মহিলা বিক্ষোভকারীকে আটক করে তার ব্যাগ ও ফোন তল্লাশি করা হয়। এর পর তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়, তার চুল ছিঁড়ে ফেলা হয়, এবং তার স্তন ও নিতম্বে হাত দেওয়া হয়। এই ঘটনার পরে তাকে যৌনতাসূচক গালিগালাজও করা হয়েছিল।
আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল ঢাকায়, যেখানে ছাত্রলীগের সদস্যরা এক মহিলা বিক্ষোভকারী, তার মা ও পরিবারের অন্যান্য মহিলাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়। এছাড়া, তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পর, ফোন করে আবারও তাদেরকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যৌন সহিংসতা রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা বাধাগ্রস্ত হন, কারণ তারা অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ পাওয়ার ভয় পায়। পাশাপাশি, অনেক ভুক্তভোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং আইনগত সহায়তা পায় না।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বলছে, তাদের দ্বারা নথিভুক্ত করা ঘটনার চেয়ে আরও অনেক বেশি ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনায় আরো গভীর তদন্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, ভুক্তভোগীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকেন এবং যথাযথ সহায়তা না পাওয়ার কারণে অনেক ঘটনা অপ্রকাশিত থেকে যায়। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এসব ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনের ফলস্বরূপ, আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে যৌন সহিংসতা এবং লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতন বিষয়ে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।