ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা বলে আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে ঘর ছেড়ে আসেন ছেলে। তাকে খুঁজতে ঢাকায় আসেন বৃদ্ধ বাবা। আসার সময় সঙ্গে আনেন ছেলে রাসেলের ছবি এবং দুই হাজার টাকা। কিন্তু এসে বাবা নিজেই সর্বস্বান্ত হলেন। মঙ্গলবার ছেলের খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন শাহেব আলী মাদবর। খুঁজতে খুঁজতে শামসুন্নাহার হলের সামনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এসময় ওই এলাকায় থাকা শহিদুল্লাহ হল সংসদের বহিরাঙ্গণ ক্রীড়া সম্পাদক ইমরান বৃদ্ধকে উদ্ধার করে ডাকসু ভবনে নিয়ে যান।
জানা যায়, বৃদ্ধ শাহেব আলী মাদবরের বাড়ি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার আলমপুর গ্রামে। চার বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা বলে বাড়ি ছাড়া ছেলের খোঁজে বরিশাল থেকে লঞ্চে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। এসময় তার কাছে ২০০০ টাকা, ছেলে রাসেলের ছবি ও অন্য কাগজপত্র ছিল। কিন্তু ঢাকার সদরঘাটে এসে টাকাসহ সবকিছু হারিয়ে ফেলেন তিনি।
তারপরও ছেলের খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। গ্রামের এই বৃদ্ধের শরীর দীর্ঘ ভ্রমণের ভার নিতে পারেনি। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে ডাকসু ভবনে নিয়ে আসা হয়। পরে কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে ঢাবি প্রক্টরের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অসহায় বাবা ছেলের ছবি হারিয়ে ফেলায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বরিশালের হিজলা উপজেলার রাসেল নামে কোনো সন্তান পড়ে কিনা তা যাচাই করে দেখেন প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। কিন্তু এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া হিজলা উপজেলার চেয়ারম্যান ও গ্রামের মেম্বারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা হয়। তারা শাহেব আলীর পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। পরে ওই বৃদ্ধকে দেশের বাড়ি বরিশালে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন প্রক্টর।
ডাকসুর পক্ষ থেকে ওই এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা জানায়, ‘শাহেব আলী মাদবর তাদের এলাকার বাসিন্দা। চার বছর আগে তার ছেলে রাসেল ঢাকায় গিয়েছিল। কিন্তু তারপর আর ফিরে আসেনি। তার খোঁজে সে ঢাকায় গিয়েছিল। এখন আপনারা শাহেব আলীকে বরিশালে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিজলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার বলেন, ‘উপজেলা থেকে রাসেল নামে কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তা আমাদের জানা নেই।’
ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘অসুস্থ বৃদ্ধকে উদ্ধার করে ইমরান ডাকসু নিয়ে আসেন। পরে তাকে প্রক্টরের কাছে পাঠানো হয়। এছাড়া তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন কিনা এর খোঁজ নেয়া হচ্ছে।’
এবিষয়ে প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ডাকসুর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। পরে তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা তেমন কাউকে পাইনি। তাই শাহেব আলীকে বরিশালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।