হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী ২০১১ সালের ২৭ জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) গঠিত হয় যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি। কিন্তু কমিটি থাকলেও এর কার্যক্রম দৃশ্যমান না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীরাই এটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ফলে যৌন হয়রানির অনেক ঘটনাই অভিযোগ আকারে কমিটির কাছে যায় না এবং কমিটি থাকাতেও শিক্ষার্থীরা তাদের উপর বিভিন্ন রকম যৌন নির্যাতন ও উত্যক্তের কোন ফলপ্রসূ বিচার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে পাঁচ সদস্যের ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ করার নির্দেশনা দেন। হাইকোর্টের নির্দেশের দুই বছরের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় এই কমিটি গঠন করলেও গত দুই বছরে কমিটির দ্বারা বাস্তবায়িত কোন কার্যক্রম আজ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছে দৃশ্যত হয়নি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীসহ অনেক শিক্ষক জানেই না বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি যৌন প্রতিরোধ কমিটি আছে। আবার এ বিষয়ে কোনও বুকলেট এমনকি প্রকাশনাও নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে অনুমোদিত দুই বছর মেয়াদী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের অক্টোবর মাসে। এই দুই বছরে অভিযোগ জমা পড়ে মোট সাতটি। এরমধ্যে দুইটি অভিযোগ মীমাংসা হলেও এখনও পাঁচটি অভিযোগ প্রশাসন দপ্তরে পড়ে আছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, গত পাঁচ বছরের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ছাত্রীরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী, বন্ধু, বড় ভাই, বহিরাগতদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কিন্তু এসব অভিযোগ প্রশাসনের কাছে গেলে কোনোটির সুষ্ঠু সমাধান পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক ছুটি অথবা সাময়িক বরখাস্তের মাধ্যমেই এসব অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়া হয়। এছাড়াও অভিযুক্তদের শাস্তিও দৃশ্যমান হয় না।
রাবির যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির প্রধান ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সেলিনা পারভীন বলেন, ‘আমরা অনেক প্রতিক‚লতার মধ্যে কাজ করি। কমিটির গোপনীয়তা রক্ষা করা যেখানে খুবই জরুরি সেখানে আমাদের দফতর, আলাদা কম্পিউটার কিংবা বসার জায়গা নেই। শুধু তাই নয়, অভিযোগকারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বও বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া কমিটি তদন্ত করে যথাসম্ভব দ্রæত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করে। এ কারণে যৌন হয়রানির মতো একটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বহীন থেকে যায় কারও কারও কাছে।
মেয়াদোউত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কার্যকালের সকল কার্যক্রম প্রশাসন দপ্তরে পাঠিয়েছি। কিন্তু গত বছরের অক্টবরে কমিটি শেষ হওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন কোন কমিটির বিষয়ে আমাদের সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়নি।’ কমিটির কার্যক্রম ও পরিচালনার বিষয়ে বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. লায়লা আরজুমান বানু বলেন, ‘রাবিতে অনেক আগে থেকেই ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ আছে যা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। আর এর কার্যক্রম এখনও অব্যাহত আছে শুধুমাত্র পর্যাপ্ত পরিমান বরাদ্দ না থাকা, ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রচারও করার বিষয়টি না থাকার কারণে একটু স্থবিরতা দেখা গিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমে সংঘটিত বিভিন্ন যৌন হয়রানির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে কেন রাষ্ট্রীয় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না এই মর্মে ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করা হয়। আদালত ২০০৯ সালে দায়ের করা মামালার রায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ সকল প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ নামে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠনের আদেশ দেওয়া হয়।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।