নিজস্ব জায়গা থাকা সত্ত্বেও মাদ্রাসা স্থানান্তর করা হয়েছে পাঁচবার। মাদ্রাসার সুপার নিজের ইচ্ছেমতো যখন যেখানে সুবিধা, সেখানেই তুলেছেন মাদ্রাসার ঘর। শিক্ষক-শিক্ষার্থী আসেন মাঝেমধ্যে। কিন্তু বেতন ঠিকমতোই নিচ্ছেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা। যদিও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
এমনই একটি এমপিওভূক্ত মাদ্রাসার সন্ধান মিলেছে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের গোপদিঘী ইউনিয়নে শ্যামপুর গ্রামে। মাদ্রাসাটির নাম শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে এই মাদ্রাসার নামে নিজস্ব জায়গা রয়েছে। মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয় ১৯৯৯ সালে। পাঠদানের একাডেমিক স্বীকৃতি পায় ২০০৫ সালে। এমপিওভুক্ত হয় ২০১০ সালে। ১৯৯৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নিজস্ব জায়গা না থাকায় শ্যামপুর বড়হাটি মসজিদের পেছনে অস্থায়ীভাবে পাঠদান চলে। পরে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত জজ মিয়া এক একর জায়গা দান করেন। একপর্যায়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে সভাপতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাধে সুপারের। দ্বন্দ্বের জেরেই সভাপতির দেওয়া জায়গায় মাদ্রাসা স্থাপনে অসম্মতি জানান তিনি। একদিন রাতের আঁধারে মাদ্রাসার সব নথিপত্র নিজের বাড়িতে নিয়ে যান সুপার। ফলে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে মাদ্রাসার কার্যক্রম। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে সুপার নিজের বাড়ির কাছে ধলাই বগাদিয়া বাজারে অস্থায়ীভাবে ঘর নির্মাণ করে কার্যক্রম শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে শ্যামপুর থেকে মাদ্রাসার ঘরগুলোও নিয়ে যান সেখানে।
আরো জানা যায়, পরিত্যক্ত একটি টিনশেড ঘরে। তিন মাস কার্যক্রম চালিয়ে আবারও ঘর নির্মাণ শুরু করেন হাওরের নিজের ফসলি জমিতে। শ্যামপুরবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ৯ সেপ্টেম্বর ঘর ভেঙে নিয়ে যান স্থায়ী জায়গায়। পরদিন রাতে মাদ্রাসা সুপার বাদী হয়ে শ্যামপুর গ্রামের ৮২ জনের নাম উল্লেখসহ শতাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করে মিঠামইন থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখা যায়। ভেতরে একটি টেবিল, একটি ভাঙা চেয়ার আর পাঁচটি বেঞ্চ ছাড়া কিছুই নেই। ছাত্র-ছাত্রী বা শিক্ষকদের কারও দেখা মেলেনি।
শ্যামপুর গ্রামের আব্বাস উদ্দীনসহ কয়েকজন জানান, মাদ্রাসায় ১৭ জন শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত কাউকে আসতে দেখা যায় না। তারা মাদ্রাসার সুপারের বিচার দাবি করেন ও তাদের বিরুদ্ধে দায়েরের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চান।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথেও কথা বলে জানা গেছে, মাদ্রাসায় লেখা পড়া না হওয়ার কেউ অন্য মাদ্রাসায় চলে গেছেন। আবার কেউ লেখা পড়াই বন্ধ করে দিয়েছেন।
মাদ্রাসার সুপার মো. আমিনুল হক জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ১৭ জন শিক্ষক ও ২৭৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তার দাবি, উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশ।
যদিও সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষক কাউকে পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে মাদ্রাসার সুপার বলেন, এখন দাখিল পরীক্ষা চলছে, আর মাদ্রাসা নিয়ে একটু ঝামেলা চলছে জেনে শিক্ষার্থীরা আসেনি।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাজারে নাম মাত্র দুটো টিনের ঘর তৈরি করে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বেতন ভাতা তুলে আসছেন ১৭ জন শিক্ষকের। আর ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি ঝড়ে লন্ডভন্ড হয় ঘরটি। তখন পাঠদান বন্ধ থাকে ছয় মাস। পরে একটা ঘর তুলে কার্যক্রম শুরু করেন বগাদিয়া গ্রামের হারিছ মিয়ার বাড়িতে। পরবর্তী তিন মাস পাঠদান দেখানো হয় ধলাই উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত ঘরে।
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুন নাহার মাকছুদা বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।
মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কলিন্দ্র নাথ গোলদার জানান, মাদ্রাসার টিনশেট ঘর ভাঙা ও নথিপত্র লুঠের অভিযোগে ৮২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত শতাধিক লোকের নামে মাদ্রাসা সুপার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।