কেন্দ্র ফি পনের হাজার, আদায় ২লাখ ৩২ হাজার !

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম সোহেল, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শুক্রবার ৩রা জুন ২০২২ ০৬:১৯ অপরাহ্ন
কেন্দ্র ফি পনের হাজার, আদায় ২লাখ ৩২ হাজার !

‘এই জায়গায় পরীক্ষা হবে, এজন্য স্যারেরা বলছে দুই হাজার টাকা লাগবে। আমাদের কষ্টতো হয়ই, কামাই (রোজগার) নাই। এখনও টাকা গুছাতে পারি নাই। বলছি, গুছাইয়া দিব। স্যারেতো চায়, পোলাপানদের কাছ থেকে। আপনারা দেখেন, একটু বন্ধ করে দিতে পারেন কিনা।’ কথাগুলো বলছিলেন চলতি বছরে অনুষ্ঠিতব্য   পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর বাবা।  অভিযোগ রয়েছে, প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে ধার্য করেছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। বাধ্য করা হচ্ছে সেই টাকা পরিশোধ করতে। 


চলতি বছরের গত ২২ মে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক চিঠির তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষা পরিচালনার জন্য মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন কেন্দ্র অনুমোদন হয়। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠান প্রধানকে গত ২৯ মে এর মধ্যে  কেন্দ্র স্থাপন ফি বাবদ ১৫ হাজার টাকা ডিডি বা পে অর্ডারে বরিশাল শিক্ষাবোর্ড সচিবের অনুকূলে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়।


অথচ এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র অনুমোদন করতে নানা খরচ দেখিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই হাজার টাকা ধার্য করা হয়; জানান শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বিদ্যালয়ে ১১৬জন এসএসসি পরীক্ষার্থী। সে হিসাব কষলে জনপ্রতি দুই হাজার হারে ২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা আদায় হওয়ার কথা।   


নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের একাধিক পরীক্ষার্থী জানান, বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র এনেছে এজন্য টাকা নিচ্ছে শিক্ষকরা। শুধু অভিভাবকদের এ কথা বলতে বলেছে। এছাড়া বাহিরের মানুষদের এসব কথা বলতে একদমই নিষেধ করেছে। কেন্দ্র আনতে নাকি ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা শিক্ষকদের নিজেদের পকেট থেকে দিয়েছে। এখনতো তুলতে হবে কিছু টাকা। প্রথমে তিন হাজার টাকা করে চেয়েছে, পরেতো দেখে সম্ভব না। বলতে বলতে শিক্ষার্থীরা দুই হাজার দিতে রাজি হয়েছে। এ জন্য প্রচুর চাপ, টাকাটা দিতেই হবে। 


শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ টাকা উত্তোলনের দায়িত্বে নিয়োজিত ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘পরীক্ষা সেন্টারের কিসের টাকা উঠাই? ছেলে মেয়েদের কাছে বকেয়া টাকা থাকে, বছরের টাকা । আমি ক্লাস টিচার, বিভিন্ন টাকা উঠাই। বছরের শুরুতে স্কুলের সেশন উঠাই। তারপর পরীক্ষা হলে পরীক্ষার ফি উঠাই। এখন কোন টাকা উঠাই না। এইতো কিছুদিন আগে ওদের প্রস্তুতি মূলক পরীক্ষা গেছে। সেখানে ৩০০ করে টাকা উঠাইছি।’ কার নির্দেশে আপনি টাকা তোলেন, জিজ্ঞেস করলে নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমি প্রধান শিক্ষকের অনুমোদনেই টাকা উঠাই।’   


পরীক্ষা কেন্দ্রের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘কেউ যদি বলে থাকে ঠিক বলেনি। কথা বোঝা যায় না। আপনার সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলবো।’ এদিকে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে মুঠোফোনে এ বক্তব্য নেওয়ার পর থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করার জন্য তদবির করতে প্রতিবেদকের কাছে একাধিক লোক পাঠান তিনি। 


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের একাডেমিক সুপারভাইজার অনাদি কুমার বাহাদুর বলেন, ‘জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্যার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। আমি খোঁজ নিয়েছি, প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কোন টাকা নেননি বলে জানিয়েছেন। তবে তারা কিভাবে টাকা নিচ্ছে, তার তথ্য আমরা চেয়েছি। আজ বা কালকে প্রধান শিক্ষক আসবে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছে, এই কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহা. মুজিবুর রহমান জানান, ‘আমি এখনই খবর নিচ্ছি। ওখানে অফিসার পাঠাবো।’