শিক্ষার্থীদের বরণ করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, নিজস্ব প্রতিনিধি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: সোমবার ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:১২ অপরাহ্ন
শিক্ষার্থীদের বরণ করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতি

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই ছাত্র ছাত্রীদের কলরব। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।এমন সিদ্ধান্তে   দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলিতে শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খুশি ও আনন্দিত। তাদের মনে ফিরে এসেছে প্রানচঞ্চলতা। তাই শিক্ষার্থীদের নিজ প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় বরণ করতে  পুরোদমে শুরু হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্নের কাজ। দেখে মনে হচ্ছে শিক্ষার্থীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে প্রতিষ্ঠান এর আঙ্গিনা। 


যদিও এখন পর্যন্ত হাকিমপুর উপজেলায়  শিক্ষক- কর্মচারীদের প্রায়   শতভাগ টিকা নিশ্চিত করলেও শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। ফলে তাদের করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কিছুটা চিন্তিত অভিভাবকরা।


উপজেলার বেশ কয়েকেটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন গিয়ে  দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠান গুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নের কাজ চলছে। ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলো ইতিমধ্যেই পরিষ্কার করা হয়েছে। পরিপাটি স্কুলের আঙিনা যেন শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার প্রহর গুনছে।


এদিকে বন্ধ থাকা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খোলার জন্য সবরকম প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে স্কুল খোলার জন্য প্রয়োজনীয় সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। 


উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদ ও মাহমুদ্দুনবী জানান, উপজেলায় ৪৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছ। প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার বিষয়ে তারা জানান, এ বিষয়ে এখনও চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের অফিসিয়াল ভাবে কোন কাগজ পাইনি। তবে প্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দিতে সবধরণের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বরণ করতে বিদ্যালয় গুলোতে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ প্রায় শেষের দিকে। আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে কাজগুলো তদারকি করতেছি। খুব শিঘ্রই সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিদ্যালয় গুলো খোলা হবে।


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের তথ্য মতে, উপজেলায় নিম্ম মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্কুল এন্ড কলেজ ও মাদ্রাসাসহ মোট ৩৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে দাখিল মাদ্রাসা ৯টি ও আলিম ও ফাজিল মাদ্রাসা ৪টি। মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ২১টি ও ৩টি কলেজ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সবরকম প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষকে। ইতিমধ্যে বন্ধ থাকা স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা গুলো খোলার জন্য ১৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে আদেশ জারি করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠান গুলোতে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ প্রায় শেষের দিকে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দেওয়া হবে। 


শিক্ষার্থী মনি, এশা, ফাহিম, রক্তিম বলেন, আগে স্কুল পালাতাম, এখন আমরা স্কুলে যেতে চাই। স্কুলে না গেলে বাড়ীতে ভালো লাগেনা। অনেকদিন পরে আমাদের স্কুল খুলছে। এতে আমরা অনেক খুশি। আমার সহপাঠীরা সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাশ করবো।


অভিভাবক নার্গিস পারভীন ও আবু রায়হানসহ অনেকে জানান, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হয়েছে। বাচ্চারা বাড়ীতে একদম পড়াশোনা করতে চায় না।  যদিও স্কুল থেকে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। তা পর্যাপ্ত নয়। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে আমরা খুব খুশি ও আনন্দিত। তবে ছোট বাচ্চারা ততটা সচেতন না। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। 


বাংলাহিলি মডেল(১) সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে স্কুল খোলার সব রকম প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বিদ্যালয় গুলোতে  আমাদের উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পরিদর্শন করছেন এবং তদারকি করছেন। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ প্রায় শেষ। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয় প্রস্তুত থাকবে। 


উপজেলার কোকতাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্কুলের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ প্রায় শেষ।  বর্তমানে শিক্ষার্থীরা বাড়ীর কাজ সম্পুর্ন করে সেগুলো প্রতি সপ্তাহে জমা দিয়ে নতুন কাজ নিয়ে যাচ্ছে।তিনি আরও বলেন,করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে আমাদের জয়ী হতেই হবে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর- এ আলম বলেন, এখনো পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে অফিসিয়ালি কোনো চিঠি পত্র পাওয়া যায়নি। তবে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিমধ্যে সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। খোলার ব্যাপারে নির্দেশনা এলেই দ্রুত সকলকে জানিয়ে দেয়া হবে।