একের পর এক বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। পেঁয়াজ, ডিম, মুরগির পর এবার রাজধানীর বাজারে বেড়েছে আলুর দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে আট টাকা পর্যন্ত। আলুর দাম বাড়ার পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের আগাম সবজি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন, পটল, ঢেঁড়শ, ঝিঙা, করলাসহ প্রায় সব সবজি। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম কমেছে।
ভারতের রফতানি বন্ধ করার খবরে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম এখনো একশ টাকাতে রয়েছে। এর সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ, গরু ও খাসির মাংস। ফলে নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি মিলছে না ক্রেতাদের। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের লবণ আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গোল আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৮ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৮-২০ টাকা। অর্থাৎ বাজার ভেদে সপ্তাহের ব্যবধানে গোল আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ৭-৮ টাকা। আলুর দাম বাড়ার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী জহির বলেন, আলুর স্টক (মজুদ) শেষ হয়ে আসছে। ফলে কমছে সরবরাহ। এ কারণে আলুর দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে শিগগিই বাজারে নতুন আলু আসবে। আর তখন আবারও দাম কমবে।
এদিকে সরবরাহ বাড়ায় শীতের আগাম সবজি শিমের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে শিমের দাম কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। শিমের পাশাপাশি কিছুটা দাম কমেছে কপির দাম। ছোট আকারের ফুলকপি মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৫-২৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০-৩০ টাকা পিস। আর গত সপ্তাহে ৩০-৪০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া বাঁধাকপির দাম কমে ২০-৩০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে মুলার দাম। আগের সপ্তাহের মতো মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে। অধিকাংশ শীতের আগাম সবজির দাম কমলেও কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো ও গাজরের দাম এখনো চড়াই রয়েছে। পাকা টমেটো আগের সপ্তাহের মতো প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা।
এর সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ, করলা, ঝিঙে, বরবটি, বেগুন, পটল, ঢেঁড়শ, উসি, মিষ্টি কুমড়া, ধুন্দুলসহ সব ধরনের সবজি। গত সপ্তাহের মতো ছোট আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। করলা, বরবটি, বেগুন, চিচিংগা, ঝিঙা, ধুনদলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকার মধ্যে। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মিলন বলেন, আস্তে আস্তে শীতের আগাম সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। শিম, কপির দাম বেশ কমেছে। এখন যদি টানা বৃষ্টি বা বন্য না হয়, তাহলে কিছুদিনের মধ্যে সব ধরনের সবজির দাম কমে যাবে। মালিবাগ থেকে বাজার করা ফাতেমা বেগম বলেন, প্রতি সপ্তাহেই কিছু না কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে। এর আগে পেঁয়াজ, ডিমের দাম বাড়ল। আর এখন বেড়েছে আলুর দাম। গত সপ্তাহে যে আলু ১৮ টাকা কেজি কিনেছি, এখন তা ২৫ টাকা চাচ্ছে। একের পর এক পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এভাবে দাম বাড়লে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের খুব কষ্ট হয়।
শান্তিনগর থেকে বাজার করা সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়বে, এটা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাই হঠাৎ কোনো কিছুর দাম বাড়লে কেউ আর উচ্চবাচ্য করে না। এই দেখেন ১০০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনে খাচ্ছি। কেউ তো পেঁয়াজ কেনা বন্ধ করছে না। একাধিক সবজির কেজি ১০০ টাকা, তা নিয়েও দেখেন কারও কোনো আপত্তি নেই। আসলে সবকিছুই আমাদের সয়ে গেছে। এদিকে মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৪০-৩৫০ টাকা কেজি। এছাড়া তেলাপিয়া ১৩০-১৬০ টাকা, পাঙাস ১২০-১৫০ টাকা, শিং ৪০০-৬০০ টাকা, কাচকি ২৫০-৩৫০ টাকা, পাবদা ৪০০-৬০০ টাকা, ট্যাংরা ৫৫০-৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি গরু ও মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৫৭০ টাকা, খাসি ৭০০-৮০০ টাকা, বয়লার ১৩৫-১৪০ টাকা, লাল লেয়ার ১৮০-২০০ টাকা, পাকিস্তানি কক ২৫০-২৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা ডজন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।