যানবাহনের হর্ন ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত জনস্বাস্থ্য,মামলার ক্ষমতা চায় পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: রবিবার ২২শে ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
যানবাহনের হর্ন ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত জনস্বাস্থ্য,মামলার ক্ষমতা চায় পুলিশ

রাজধানী ঢাকায় যানবাহনের হর্ন ব্যবহারের কারণে মারাত্মক শব্দদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের অবাধ হর্ন বাজানোর ফলে মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। যানজটের মধ্যে আটকে পড়লেও চালকরা হর্ন বাজানো থামাচ্ছেন না, যা নগরবাসীর জন্য একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অতিরিক্ত শব্দ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।


ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) গত ২৯ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারপাশের দেড় কিলোমিটার এলাকাকে 'নীরব এলাকা' হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তবে, সেই ঘোষণা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। নীরব এলাকাতেও যানবাহনগুলোর হর্ন বাজানোর ঘটনা ঘটছে। শব্দদূষণের ফলে হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষত, রোগী, শিশু, বৃদ্ধ এবং ট্রাফিক সদস্যরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন।


শব্দদূষণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চাইছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গত ১৯ ডিসেম্বর, ডিএমপি কমিশনার মো. সাজ্জাত আলী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে যানবাহনের হর্ন বাজানো বন্ধে অন দ্য স্পট মামলা করার ক্ষমতা চেয়েছেন। কমিশনার জানিয়েছেন, তারা বর্তমানে আইনগতভাবে শুধুমাত্র হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন, তবে সাধারণ হর্ন ব্যবহারের বিরুদ্ধে তাদের কোনো পদক্ষেপ নেই।


২০১৭ সালে হাইকোর্ট হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধে নির্দেশ দিয়েছিল। তবে, সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার শব্দ মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এটি মানসিক চাপ, হৃদরোগ, শারীরিক অক্ষমতা এমনকি বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর। নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. ইমরান খান বলেন, শব্দদূষণ শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।


শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ এবং পরিবহন কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর মনোভাব গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করলেই নয়, চালকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিও জরুরি।


ঢাকায় বর্তমানে শব্দের গড় মান ৯৫ ডেসিবেল, যা স্বাস্থ্যগতভাবে বিপজ্জনক। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্বে শব্দদূষণে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।