বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প, যা দেশের রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ তৈরি করে, বর্তমানে একটি গুরুতর সংকটের মধ্যে পড়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ, জ্বালানি সংকট এবং ব্যাংক খাতের অস্থিতিশীলতা—এই সব সমস্যাই পোশাক শিল্পকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সম্প্রতি জানিয়েছে, গত ছয় মাসে প্রায় ১০০ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
বিজিএমইএ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫৮টি পোশাক কারখানা এখনও শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না, যা শিল্পের জন্য একটি বড় সংকটের ইঙ্গিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু শ্রমিকদেরই নয়, দেশের অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। শিল্প মালিকরা অভিযোগ করেছেন, সরকার বড় শিল্পের দিকে নজর দিলেও ছোট এবং মাঝারি পোশাক কারখানাগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করছে না।
ডিসেন্ট ট্যাক্স এর চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ কাফি বলেন , যদি সরকার তাদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে, তবে এই সংকট অনেকটাই সমাধান হবে। তিনি বলেন, “এলপি গ্যাস ব্যবহার করলে আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে, ফলে উৎপাদনে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।”
বিজিএমইএ-এর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “বড় কোম্পানিগুলো সরকারি সহায়তা পাচ্ছে, কিন্তু ছোট শিল্পগুলো সেই সুবিধা পাচ্ছে না। এই অসম নীতির কারণে আমাদের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।” তিনি আরও জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে প্রায় ১০০ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে এবং এই অবস্থায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমে যেতে পারে। সম্প্রতি, শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং পাকিস্তানে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কতা সংকেত। বায়াররা বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে, যা রপ্তানি আয়ের উপর বড় আঘাত হানতে পারে।
এ অবস্থায়, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নিরাপদ রাখতে হলে সরকারের উচিত ছোট এবং মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতি সমান মনোযোগ দেয়া এবং তাদের জন্য কার্যকর সহায়তা নিশ্চিত করা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।