নওগাঁয় কমেছে কাঁচা মরিচের ঝাঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২রা সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:০২ অপরাহ্ন
নওগাঁয় কমেছে কাঁচা মরিচের ঝাঁজ

কিছুদিন আগেও যেখানে দামের কারণে কাঁচা মরিচের ঝাঁজ ছিল আকাশচম্বী। নওগাঁর বাজারগুলোতে গত গত ১সপ্তাহ থেকে দাম কমে যাওয়ায় মরিচের ঝাঁজ কমতে শুরু করেছে। এতে সাধারন ক্রেতাদের মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে। তবে দাম কমে যাওয়ায় মরিচ চাষীরা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছে। 


নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এর তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। গত এক মাস আগেও যেখানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ পাইকারীতে ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ওই মরিচ  খুচরা বাজারে ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মরিচের দাম বেশি পাওয়া চাষিদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছিল। কিন্তু মরিচের দাম বেশি থাকায় সাধারন ক্রেতাদের মাঝে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। 


গত এক সপ্তাহ থেকে পাইকারিতে প্রতিকেজি মরিচ ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। এতে সাধারণ স্বস্থি ফিরেছে ক্রেতাদের মাঝে। জানা গেছে, প্রয়োজনের তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় কমতে শুরু করেছে কাঁচা মরিচের দাম। বগুড়াসহ কয়েকটি জেলা থেকেও নওগাঁর বাজারগুলোতে মরিচ আসছে। এ কারণে মরিচের দাম কমতে শুরু করেছে।


জেলার সবজি এলাকা হিসেবেখ্যাত সদর উপজেলার আংশিক এলাকা, বদলগাছী ও মহাদেবপুর উপজেলা। স্থানীয় সবজির চাহিদা মিটিয়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে মরিচ ক্ষেতের সমারোহ। প্রতিদিন বিকেলে ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে পরদিন বাজারে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এখন চলছে মরিচ তোলার মৌসুম। 


সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়ন এর গোবিন্দপুর গ্রামের মরিচ চাষি রমজান আলী জানান, হামার দুই বিঘা জমি মরিচের আবাদ করিছি। গত সপ্তাহে পাইকারি দরে হামি ১০০ টেকা কেজি হিসাবে ৪হাজার টেকা মণে মরিচ বিক্রি করছিলাম তবে বর্তমানে দাম কুমা গেছে। এখন প্রতি কেজি মরিচ ৪০ থ্যাকা ৫০ টেকা কেজি দরে ২হাজার টেকা মণে বিক্রি করা লাগিচ্ছে। মরিচের আমদানি বাড়ার জন্নি দাম কুমা গেছে। তবে আগের মত দাম থাকলে লাভ এ্যানা বেশি পানুনি।


নওগাঁ সদর উপজেলা বক্তারপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের মরিচ চাষী আব্দুল লতিফ এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, হামার ১০কাঁঠা জমিত কাঁচা মরিচের আবাদ করিছি সপ্তাহে ক্ষেতোত থ্যাকা দুই বার মরিচ তোলা যায়। কিছুদিন আগে হামি ১০০ টেকা কেজি দরে পাইকারি মরিচ বিক্রি করিছি প্রায় দেড় মনের মতন । গত ১৫দিন আগেও ৮০ টেকা দরে আঁধামণ মরিচ বিক্রি করিছি। আর বর্তমানে ৪০ থ্যাকা ৫০ টেকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি করা লাগিচ্ছে। হঠাৎ করা মরিচের দাম কুমা গেল। আগের মতন দাম যদি পানুনি তয়  বেশি লাভ হলোনি। এদিকে আবার কয়েক দিন থ্যাকা থামা থ্যামা বৃষ্টি হচ্ছে যার জন্নি গাছের গুটিগুলা মরা যাচ্ছে। এর কারনে এ্যানা সমস্যা হচ্ছে। তবে এখানকার কৃষি কর্মকর্তা স্যারেরা কিছু ভিটামিন জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করার জন্নি বলার পর ক্ষেতোত দিছি কিন্তু তেমন কাজ হচ্চেনা।


তিনি আরো বলেন, ১০ কাঠা জমিত শ্রমিক, সার ও আইল বাঁধাসহ মরিচ ক্ষেতোত  প্রায় পাঁচ হাজার টেকার মতন খরচ হয়। আশ্বিন মাসোত জমিত চারা রোপণ করা লাগে। চারা বড় হইয়া উঠার পর কীটনাশক আর ভিটামিন দিতে প্রতি সপ্তাহে ৩০০ টেকা থ্যাকা ৪০০ টেকা খরচ হয়। প্রায় পাঁচ মাসের এ আবাদে এই পরিমাণ জমিত থ্যাকা লক্ষাধিক টেকার মরিচ বিক্রি করা যায়।


নওগাঁর শহরের তাজের মোড়ের কাঁচা বাজারের দোকানী ফিরোজ হোসেন বলেন, কিছুদিন আগেই ১০০টাকা দরে পাইকারি হিসেবে চাষিদের কাছে থেকে কাঁচা মরিচ কেনা হতো। আর সেই মরিচ খুচরা বিক্রি করতাম ক্রেতাদের কাছে ১২০-১৩০কেজি দরে। তবে বর্তমানে মরিচের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে। এখন আমরা চাষিদের কাছে থেকে ৪০-৫০টাকা কেজি দরে মরিচ কিনে খুচরা ৬০-৭০কেজি হিসেবে বিক্রি করছি। এবারে জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মরিচের আবাদ হয়েছে । এছাড়া পাশ্ববর্তী জেলা বগুড়াসহ কয়েকটি জেলা থেকে নওগাঁয় মরিচ টুকছে যার কারনে দাম কমে গেছে।


নওগাঁ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মো: আনোয়ারুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। এর মধ্যে শুধু সদর উপজেলায় ১৮০ হেক্টর জমিতে মরিচের উৎপাদন হয়েছে। মরিচ গাছে অনেক সময় ভাইরাস হয়ে পাতাগুলো কুকরিয়ে (গুটিশুটি) যায়। এজন্য ভাল বীজের চারা রোপন করতে হবে। আর বৃষ্টিতে যদি পঁচানি রোগ দেখা দেয়, তবে কৃষকরা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি অফিসার আছে। তাদের থেকেও পরামর্শ নেয়া যাবে। কৃষকদের সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করা হয়ে থাকে।