আসহাবে কাহাফ: ঈমান ও ধৈর্যের এক অনন্য গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২২শে অক্টোবর ২০২৪ ১১:২২ পূর্বাহ্ন
আসহাবে কাহাফ: ঈমান ও ধৈর্যের এক অনন্য গল্প

পবিত্র কোরআনের ১৫ পারায় বর্ণিত আসহাবে কাহাফের ঘটনা মানবজাতির জন্য একটি চিরন্তন শিক্ষা। এই ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মাদীর উদ্দেশ্যে পূর্ববর্তী যুগের চিত্র তুলে ধরেছেন, যেখানে সাত যুবকের ঈমান এবং ধৈর্য প্রতিকূল পরিবেশে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে।


ইসলাম পূর্ব যুগে, যখন মানুষ মূর্তি পূজায় লিপ্ত ছিল, তখন সাত যুবক নিজেদের অন্তরে এক নতুন দিগন্তের সন্ধান পান। তারা মনে করেন, কল্পিত মাবুদ কি করে তাদের জীবনের মালিক হতে পারে? এ নিয়ে তাদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়, এবং তারা আল্লাহর একত্বের দিকে ফিরে আসেন। এই পরিবর্তন তাদের সমাজের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, তাই তারা নিজেদের ঈমান গোপন রাখতে বাধ্য হন।


একদিন, রাজা তাদের সম্পর্কে জানতে পারলেন এবং তাদেরকে রাজ দরবারে ডেকে পাঠান। যুবকেরা সাহসিকতার সাথে রাজার সামনে তাদের ঈমানের কথা বলেন। তারা জানান, তারা মূর্তি পূজার পক্ষে নয় এবং তাদের আত্মা আল্লাহর দিকে ফিরতে চায়। রাজা তাদেরকে অবরুদ্ধ না করে ফয়সালার জন্য ফিরে যেতে বলেন। 


যুবকেরা তখন সিদ্ধান্ত নেন, তারা এমন স্থানে চলে যাবেন যেখানে আল্লাহর ইবাদত করতে পারবেন। তারা এক গুহায় প্রবেশ করেন এবং সেখানে দীর্ঘ নিদ্রায় পড়ে যান। আল্লাহর এক আশ্চর্যজনক ইচ্ছায়, তারা ৩০৯ বছর ধরে ঘুমিয়ে ছিলেন, আর এই সময়ে পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন ঘটে যায়।


তাদের জাগ্রত হওয়ার পর যখন এক যুবক শহরে খাদ্য ক্রয়ের জন্য বের হন, তখন তিনি আবিষ্কার করেন যে সবকিছুই বদলে গেছে। পুরনো পরিচিত স্থানের পরিবর্তে নতুন নতুন প্রাসাদ ও মানুষ। তিনি যখন গহীন অতীতের মুদ্রা দিয়ে খাদ্য কিনতে যান, তখন সবাই তাকে সন্দেহের চোখে দেখে। অবশেষে, তার পরিচয় প্রকাশ পায় এবং জানা যায় যে, তারা দীর্ঘ সময় ধরে নিখোঁজ যুবক।


নতুন বাদশাহ তাদেরকে সংবর্ধনা জানান, কিন্তু যুবকরা বলেন, তারা আর্থিক সুবিধা কিংবা নতুন জীবনে ফিরে আসতে চান না। বরং তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য প্রার্থনা করেন। অবশেষে, তারা আল্লাহর কাছে ফিরে যান এবং চিরন্তন শান্তিতে প্রবেশ করেন।


আসহাবে কাহাফের এই ঘটনা শুধু ধর্মীয় উপদেশ নয়, বরং ধৈর্য, ঈমান, এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের এক অসামান্য উদাহরণ। আজকের সমাজে যেখানে অনেকেই ঈমানের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, যুবকদের এই গল্প আমাদের শক্তি ও অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে। এটি প্রমাণ করে, আল্লাহর পথে চলা মানেই সত্যিকারের মুক্তি।