বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে তাবলিগ জামাতে তৈরি হয়েছে গভীর বিভক্তি। একদিকে, মাওলানা সাদ কান্ধলভী ও তার অনুসারীরা ইজতেমায় তার উপস্থিতি দাবি করেছেন, অন্যদিকে, তাবলিগের অন্য অংশ তাকে আসতে দিতে নারাজ। সাদপন্থিরা এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদকে আনতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন, এমনকি তারা প্রথম পর্বে ইজতেমা আয়োজনেরও আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইজতেমার তারিখ নির্ধারণের সভায় উপস্থিত হয়ে এ দাবি তোলা হয়।
এদিকে, সাদপন্থিদের দাবির পর রাজধানী ঢাকা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত একটি ইসলামি মহাসম্মেলনে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। এই মহাসম্মেলনের বক্তারা সাফ জানিয়ে দেন যে, যদি স্বঘোষিত আমির মাওলানা সাদ ও তার অনুসারীদের বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হয়, তবে বর্তমান সরকারের জন্য বিপদ দেখা দিতে পারে। তারা স্পষ্ট ভাষায় হুঁশিয়ারি দেন যে, সরকারকে দেশ ছেড়ে পালাতে হতে পারে যদি মাওলানা সাদ দেশে আসেন।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘‘সাদপন্থিরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব এবং তাদের কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না।’’ তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব, তবে মনে রাখতে হবে, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা মেনে নেওয়া হবে না।’’
বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আব্দুল হামিদ (পীর মধুপুর) আরও বলেন, ‘‘তাবলিগ জামাতের ইজতেমায় মাওলানা সাদকে আনার কোনো ষড়যন্ত্র হলে সরকারকেও পালাতে হবে।’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘মাওলানা সাদ তাবলিগের প্রকৃত আমির নয়, তার বক্তব্য ইসলামের মূল ধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’’
এছাড়া, জামিয়া কোরআনিয়া বৌয়াকুর মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা ইসমাইল নুরপুরী এবং জামেয়া হোসাইনিয়া মিরপুর মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া মাওলানা সাদকে তাবলিগের আমির হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করেন এবং তাকে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে না দেওয়ার দাবি জানান। তারা বলেন, ‘‘তাবলিগ জামাতের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামের প্রচার-প্রসার, এবং সাদ তার বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলামের মৌলিক দিকগুলোকে ভুল বোঝাচ্ছেন।’’
মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী সাদকে কাদিয়ানির সাথে তুলনা করেন এবং তাকে বাংলাদেশের ইসলামী সমাজে অবাঞ্চিত ঘোষণা করার আহ্বান জানান। তারা আরও বলেন, ‘‘মাওলানা সাদ তাবলিগ জামাতের আদর্শ এবং ইসলামের মৌলিক শিক্ষার সাথে বিরোধী বক্তব্য দেন, এবং সেজন্য তাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।’’
এছাড়া, ময়মনসিংহের বিশিষ্ট আলেম মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী মন্তব্য করেন, ‘‘মাওলানা সাদ তার পিতার আদর্শকে হত্যা করেছেন, এবং তিনি তাবলিগ জামাতের আমির হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’’
এ প্রেক্ষাপটে, তাবলিগ জামাতের বিভক্তি এবং সাদপন্থি ও বিরোধীদের মধ্যে উত্তেজনা চলতে থাকলেও, সরকারের কাছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চরম গুরুত্ব রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।