চলতি অর্থবছর রিটার্নে ৫০ লাখ টাকার বেশি আয় ও সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রয়োজন মনে করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জেল-জরিমানার পাশাপাশি তাঁর ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দ করবে। রাজনীতিবিদ, সরকারি আমলা, ব্যবসায়ীসহ কেউ এর বাইরে নয়। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি এনবিআরের প্রাথমিক তদন্তে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে আটক ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের রিটার্নে আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাব গোপনের তথ্য মিলেছে। করদাতাদের অনেকে কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করলেও রিটার্নে তার তথ্য নেই। এনবিআরের তদন্তে এই প্রমাণও পাওয়া গেছে। একইভাবে অনেক চিকিৎসক, আইনজীবী, শিল্পী, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার করদাতার রিটার্নেও আয়-ব্যয় এবং সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসবের পুনরাবৃত্তি এড়াতে এবং চলতি করবর্ষে আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাবে স্বচ্ছতা আনতে রিটার্নের তথ্য যাচাইয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এনবিআর।
রিটার্নের তথ্য যাচাই করতে এরই মধ্যে এনবিআর প্রত্যেক কর অঞ্চল থেকে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কর অঞ্চলের প্রাথমিক তদন্তে কারো রিটার্নে গরমিল পাওয়া গেলে আরো বিস্তারিত তদন্তে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলে (সিআইসি) পাঠানো হবে। সিআইসির তদন্তে মিথ্যা তথ্যের প্রমাণ পাওয়া গেলে রাজস্ব আইন অনুসারে মামলা করবে এনবিআর। মামলায় দোষী প্রমাণ হলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া কারো রিটার্নে ৫০ লাখ টাকার বেশি আয় ও সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেল এনবিআর মনে করলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দ করতে পারবে।
চলতি অর্থবছরে এক করবর্ষে সাধারণ আয়ের কোনো ব্যক্তির করযোগ্য আয় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি থাকলে তাঁকে বাধ্যতামূলক কর পরিশোধ করতে হবে। তবে করযোগ্য আয় না থাকলেও কেউ ইচ্ছা করলে আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা আনতে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। নারী করদাতাদের রিটার্ন দাখিলে ছাড় দিয়ে তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে নিয়মিত রিটার্ন দাখিল শুরু হয়েছে গত ১ জুলাই। শেষ সময় আগামী ৩০ নভেম্বর। যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে এ সময়ের পরও করদাতা রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এর জন্য সংশ্লিষ্ট উপ-কর কমিশনারের অনুমতি নিতে হবে। চলতি করবর্ষে ১২ ডিজিটের ইটিআইএন ছাড়া আয়কর রিটার্ন গ্রহণযোগ্য হবে না।
এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একজন দায়িত্বশীল নাগরিককে নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করতে হবে। রিটার্নে আয়-ব্যয় ও সম্পদের সঠিক তথ্য দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এবার শুরু থেকেই রিটার্নে কঠোর নজরদারি করা হবে। বিশেষভাবে সম্পদশালীদের রিটার্নে দেওয়া তথ্য বিশেষভাবে যাচাই করা হবে।’ প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা বা তার বেশি বাড়িভাড়া পাচ্ছেন এমন বাড়ির মালিকদের এবং একটি ফ্ল্যাটে ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি ভাড়া পরিশোধ করে থাকছেন এমন ভাড়াটিয়ার রিটার্নে দৃষ্টি রাখা হবে। প্রয়োজনে এসব ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব মিলিয়ে দেখা হবে। ভাড়ার রসিদের কপি, প্রাপ্ত বাড়িভাড়া ব্যাংকে জমা দেওয়ার বিবরণী রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানির শেয়ার লেনদেন থেকে মুনাফা হলে এসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে। সঞ্চয়পত্র থেকে সুদ আয় থাকলে সঞ্চয়পত্র নগদায়নের সময় নেওয়া সার্টিফিকেটের কপি রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে। মোটরগাড়ির মালিকদের বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, স্থপতি বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে নিবন্ধিত হলে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক। এ বছর বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীরা প্রকৃত আয়ের ওপর হিসাব মতো কর পরিশোধ করছেন কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। অনেক সময় বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের প্রকৃত আয় গোপন করে কর্তৃপক্ষ কম রাজস্ব পরিশোধ করে। এবার ব্যাংকে তাঁদের বেতন পরিশোধের তথ্য সংগ্রহ করে মিলিয়ে দেখা হবে। সূত্র: কালের কণ্ঠ
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।