প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এবং দেশের শীর্ষ ১০ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাংক ঋণে অনিয়ম, কর ফাঁকি, অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। সরকার গঠিত ১১টি তদন্ত দল এই অনিয়ম অনুসন্ধান করছে এবং ইতোমধ্যে পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদের বিপুল হদিস পাওয়া গেছে।
তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, শেখ পরিবারসহ ১১টি শিল্পগোষ্ঠীর পাচারকৃত অর্থ এবং বিদেশে গড়ে তোলা বিপুল সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ৫৭ হাজার ২৬০ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ও শেয়ার ইতোমধ্যে জব্দ করা হয়েছে। এই তদন্তকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বয়ে যৌথ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ নিরাপত্তাবিশিষ্ট কক্ষে এই তদন্তের নথিপত্র তৈরি করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে সহায়তা করা হচ্ছে। দ্য স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি (এসটিএআর), ইন্টারন্যাশনাল এন্টি করাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (আইএসিসিসি), যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি (আইসিএআর) এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে।
তদন্তের আওতায় থাকা শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছে আরামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ ও সামিট গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ও তদন্তের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিএফআইইউ এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫৭৩টি ব্যাংক হিসাবে ১৬৮০ কোটি টাকা ও ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১৮৮টি বিও হিসাবে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার অর্থ ও শেয়ার স্থগিত করেছে। এই তথ্যের সত্যতা একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আদালতের নির্দেশনায় এখন পর্যন্ত দেশে জব্দ করা সম্পদের পরিমাণ ৪৬ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থাবর সম্পদ ৯ হাজার ৯৯৯ কোটি এবং অস্থাবর সম্পদ ৩৬ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। বিদেশে থাকা সম্পদের পরিমাণ ১০ হাজার ৪৫৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে স্থাবর ৬০৯৭ কোটি এবং অস্থাবর ৪৩৫৪ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে দেশে ও বিদেশে স্থগিত সম্পদের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ২৬০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এই তদন্ত সম্পন্ন হলে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে দেশের অর্থনীতি ইতিবাচক প্রভাব পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।