তিস্তা নদীতে আকস্মিক পানি বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে যাচ্ছে বালুচর, ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার বিকেল ৩টার পর থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ বাড়তে থাকে এবং সন্ধ্যা ৬টায় তা ৫০ দশমিক ১০ সেন্টিমিটারে পৌঁছায়, যা স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে সামান্য কম। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যারাজের ছয়টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা পারে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয়রা। আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে জেগে ওঠা বালুচরে থাকা রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, ডাল-বাদামসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে পানি ওঠা-নামা করলে চাষাবাদে মারাত্মক ক্ষতি হবে।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, তিস্তার পানি হঠাৎ বেড়েছে, তবে নির্ধারিত সময়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। পানির প্রবাহ নিয়ে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন হলেও কর্মসূচি বন্ধ হবে না।
এদিকে, ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপ অপারেটর নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভারত থেকে ছাড়া পানি তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে প্রবাহ বাড়িয়েছে। তবে কী পরিমাণ পানি আসবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নিচু এলাকাগুলোতে বন্যার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকদের মতে, খরা মৌসুমে এভাবে পানি বাড়লে চাষের ক্ষতি হয়, কারণ নদীর চরাঞ্চলে ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারি সহযোগিতা ও আগাম সতর্কতা ছাড়া কৃষকদের ক্ষতি পোষানো সম্ভব নয় বলে তারা মনে করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে আরও জলকপাট খুলে দেওয়া হবে।
তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আলোচনার দাবি জানিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারত একতরফাভাবে পানি ছেড়ে দিলে কিংবা আটকে রাখলে বাংলাদেশের তিস্তা পারের জনগণ ভোগান্তির শিকার হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে যাওয়া এবং বর্ষা কিংবা হঠাৎ ছাড়া পানিতে প্লাবনের ঘটনা নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি পর্যায়ে দুই দেশের আলোচনায় তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতের দাবি উঠলেও এখনো কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। পানি বৃদ্ধির কারণে যদি ফসলহানি ঘটে, তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে কিনা, সে বিষয়েও এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি।
তিস্তা পারের কৃষকরা বলছেন, নদীর পানির হঠাৎ ওঠানামার ফলে চাষাবাদে বড় ধরণের ক্ষতি হয়। তারা চান, পানি ব্যবস্থাপনার একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান আসুক, যাতে তারা নির্ভরযোগ্যভাবে কৃষিকাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।