রেলওয়ে কর্মচারীদের আন্দোলনে সোমবার রাত থেকে সারা দেশে ট্রেন বন্ধ হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: সোমবার ২৭শে জানুয়ারী ২০২৫ ১০:৩১ পূর্বাহ্ন
রেলওয়ে কর্মচারীদের আন্দোলনে সোমবার রাত থেকে সারা দেশে ট্রেন বন্ধ হচ্ছে

বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা তাদের পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধায় মাইলেজ যুক্ত করার দাবিতে সোমবার রাত ১২টা থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, ১৬০ বছরের পুরনো নিয়ম হঠাৎ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় এই সুবিধা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই সমস্যার সূত্রপাত হয়। 


রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা জানানো হলেও রানিং স্টাফরা বারবার আশ্বাস পেয়ে হতাশ হয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতিতে থাকবেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ সুবিধা সীমিত করার জন্য রেল মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়। এতে আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজকে টিএ খাতে স্থানান্তর করা হয়। এতে কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হন এবং আন্দোলনের পথে হাঁটেন। 


রানিং স্টাফদের অভিযোগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সমস্যাগুলোর সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় বারবার আপত্তি জানিয়েছে। ফলে সমস্যার সমাধান আটকে রয়েছে। তারা আরও জানান, একজন রানিং স্টাফ দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বাড়তি ভাতা পাওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন নীতিমালায় এই সুবিধা কেটে দেওয়া হয়েছে। এতে তারা অতিরিক্ত কাজের জন্য কোনো প্রণোদনা পাচ্ছেন না। 


রেলওয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মাইলেজ সুবিধার ওপর ভিত্তি করেই ট্রেনের সময়সূচি নির্ধারিত হয়। কিন্তু বর্তমানে একজন কর্মীকে দুই জনের কাজ করতে হচ্ছে, যা শ্রম আইনেরও লঙ্ঘন। রানিং স্টাফদের অভাবে ডিসেম্বর মাসে অনেক ট্রেনের যাত্রা বাতিল করতে হয়েছিল। কর্মচারী সমিতি জানায়, বর্তমানে রানিং স্টাফের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে কাজের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাইলেজ সুবিধা না থাকায় কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। 


সমস্যার সমাধানে গত তিন বছরে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হলেও স্থায়ী কোনো ফলাফল আসেনি। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয় কিছুটা নমনীয় হয়। তবে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ায় কর্মীরা আরও হতাশ হন। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম জানিয়েছেন, আন্দোলন এড়াতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু রানিং স্টাফদের দাবি, তারা আর আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না। 


রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেছেন, আমাদের দাবি আদায় না হলে ট্রেন চালানো বন্ধ থাকবে। দীর্ঘদিন ধরে চলা সমস্যার সমাধান না হওয়ায় কর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। মজিবুর রহমান বলেন, আমরা বারবার আলোচনার জন্য সময় দিয়েছি। কিন্তু এবার আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ২৮ জানুয়ারি থেকে আমাদের কর্মসূচি চালু থাকবে এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। 


রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও রানিং স্টাফরা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্ট চিঠি না আসে, ততক্ষণ তারা ট্রেন চালানো শুরু করবেন না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা সংশোধনের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মীরা বলছেন, তাদের এই কর্মসূচি মূলত নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য।