ছাত্রদল নেতাকে ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা, আহত পুলিশের এসিসহ ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: শুক্রবার ২৪শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৬:৪৮ অপরাহ্ন
ছাত্রদল নেতাকে ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা, আহত পুলিশের এসিসহ ৫

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে একজন ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে মিথুনকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। মিথুনের গ্রেফতারের পর থানা প্রাঙ্গণে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশের গাড়ি থানা চত্বরে প্রবেশের সময় মিথুনের সমর্থকরা বাধা দেয় এবং পুলিশের হেফাজত থেকে তাকে ছিনিয়ে নিতে হামলা চালায়। এতে ছাত্রদল ও যুবদলের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী অংশ নেয় বলে জানা গেছে।

হামলার ঘটনায় নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার তারিক লতিফসহ চার-পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং হামলায় জড়িত ছয়জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বশির ইসলাম (২৮), মোহাম্মদ হাসান (২১), মোহাম্মদ ইমন (২৫), মাসুম মাহমুদ (৩২), মোহাম্মদ আলামিন (৩০), ও আকবর আলী (২৬) রয়েছেন।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক ওমর ফারুক বাদী হয়ে পৃথক একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ‘ইমন গ্রুপ’ ও ছাত্রদল নেতাদের চাঁদাবাজি, দাঙ্গা এবং হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

জানা যায়, গত ১০ জানুয়ারি মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হককে কুপিয়ে আহত করা হয়। ঘটনার পেছনে ইমন গ্রুপের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। তদন্তে জানা যায়, ইমন গ্রুপের হয়ে চাঁদা সংগ্রহ এবং দাঙ্গা কার্যক্রমে মিথুনের সরাসরি ভূমিকা ছিল।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঘটনার পর গ্রেফতার হওয়া এক আসামি রিমান্ডে মিথুনের নির্দেশে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকা থেকে মিথুনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তার সমর্থকরা সংঘবদ্ধ হয়ে থানায় হামলা চালানোর চেষ্টা করে।

নিউমার্কেট থানার ওসি মোহসিন উদ্দিন আতিক বলেন, “গ্রেফতারকৃত মিথুনকে পুলিশের গাড়ি থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল তার সমর্থকরা। তবে পুলিশ তা প্রতিহত করে। এ ঘটনায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।”

এদিকে, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দারা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।

গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদল নেতা মিথুনের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। এলাকাবাসীর দাবি, দুষ্কৃতকারীদের দমন করতে প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনা থেকে রাজনৈতিক সংঘাতের নতুন এক মাত্রা বোঝা যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হলেও, রাজনৈতিক সহিংসতার পুনরাবৃত্তি বন্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।