ইউএসএআইডির নতুন নির্দেশনা: বাংলাদেশে সব প্রকল্প স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
উত্তম গোলদার
প্রকাশিত: রবিবার ২৬শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৫:৩১ অপরাহ্ন
ইউএসএআইডির নতুন নির্দেশনা: বাংলাদেশে সব প্রকল্প স্থগিত

মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে চলমান সব প্রকল্প ও কর্মসূচির ব্যয় বন্ধ করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ইউএসএআইডির বাংলাদেশ কার্যালয়ের পরিচালক রিচার্ড বি অ্যারন গত শনিবার চিঠি দিয়ে এই নির্দেশনা প্রদান করেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ইউএসএআইডির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সব স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে। ইউএসএআইডি’র পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস থেকে জারি হওয়া একটি নির্বাহী আদেশের প্রেক্ষিতে।


চিঠির মধ্যে বলা হয়েছে, সংস্থার অধীনে চলমান সব প্রকল্পের মার্কিন অংশের ব্যয় এখন থেকে বন্ধ থাকবে। ইউএসএআইডি’র একাডেমিক সুপারভাইজারও একাধিকবার আশ্বস্ত করেছেন যে, পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এদিকে, চিঠির মাধ্যমে আরও বলা হয়েছে যে, বর্তমানে চলমান প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে খরচ সংকোচন করা হবে এবং সবার মধ্যে সমন্বয় করা হবে। 


এদিকে, ২০ জানুয়ারি মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হোয়াইট হাউস থেকে যে নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়েছে, তাতে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে চলমান সব প্রকল্পের কার্যক্রম কিছুদিনের জন্য স্থগিত থাকবে। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিরূপ প্রভাব পড়বে। ইউএসএআইডির চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, যেসব প্রকল্পের সঙ্গে অর্থায়ন জড়িত, সেগুলোতে যুক্তিসংগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


ইউএসএআইডি’র বাংলাদেশ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সৃষ্ট অচলাবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, বৈদেশিক সাহায্যের পুনর্মূল্যায়ন এবং পুনর্সামঞ্জস্যকরণের আওতায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, মার্কিন সরকার এখন থেকে বিদেশি সাহায্যকে আরও কৌশলগতভাবে ব্যবহার করবে, যাতে এটি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী পররাষ্ট্রনীতি ও বিদেশি সম্পর্কের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।


২০২৪ সালে বাংলাদেশে ইউএসএআইডির পক্ষ থেকে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে এই নতুন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে ইউএসএআইডি’র ভবিষ্যৎ সহায়তা কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে পিইপিএফএআর কর্মসূচি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই কর্মসূচি ২০০৩ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ২৬ মিলিয়ন মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেছে, তবে এখন এটি স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।


মার্কিন সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশে এর প্রভাব ব্যাপক হতে পারে। একদিকে যেমন বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণের জন্য সহায়তা বন্ধ হতে যাচ্ছে, তেমনি মার্কিন সরকারের বিদেশি সহায়তার আদর্শে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। বিশেষত, চীন ও অন্যান্য দেশগুলোর কাছে এই ধরনের সহায়তা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। 


এদিকে, গত কয়েক বছরে মার্কিন সহায়তা বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকটের পর থেকে ব্যাপক সহায়তা পেয়েছে। তবে বর্তমানে এই সহায়তা বন্ধ হওয়ার পর, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। 


যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নতুন বাস্তবতায় পা রাখছে। চীন এবং রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার কৌশলও পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নতুন আদর্শের দিকে এগোচ্ছে, যা চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় কার্যকর হবে।


এদিকে, ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, ইসরাইল ও মিসরের জন্য সামরিক সহায়তাকে এই আদেশের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। সুতরাং, এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের সামরিক সহযোগিতা বন্ধ হতে পারে।  


যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তার নতুন কাঠামো বেশ কিছু দেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে। কারণ, আগে যে সমস্ত প্রকল্পগুলি অব্যাহত ছিল, তা এখন থমকে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, স্বাস্থ্য খাতে সহায়তার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা হতে পারে।  


এই নতুন পরিবর্তন আসলে বাংলাদেশের জন্য বড় একটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। যে সকল প্রকল্প চলছিল, তা এখন শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। ২০২৩ সালে ৪৯০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা কার্যক্রম বাংলাদেশে ছিল, তবে নতুন আদেশের পর এটি স্থগিত হতে পারে।